জাতীয়

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ

ঢাকা, (১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪), ওপেন প্রেস ডেস্ক/বাসস : রাজধানীর পিলখানা (তৎকালীন বিডিআর সদরদপ্তর) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫৮ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বরাবর অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

এ অভিযোগ দায়ের করেন নির্মম ও বর্বরোচিত ওই হত্যাকাণ্ডে শহিদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা। এ সময় হত্যার শিকার তৎকালীন বিডিয়ারের মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে ব্যারিস্টার রাকিন আহমেদ, শহিদ কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী ফেরদৌসী, কর্নেল কুদরত এলাহীর ছেলে সাকিব রহমানসহ ১৫-২০ জন শহিদ পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নৃশংসভাবে খুন হওয়ার নেপথ্যে বিডিআর বিদ্রোহ নয় বরং বিষয়টি পরিকল্পিত ছিল বলে দাবী করেন শহিদ কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী মেহরিম ফেরদৌসি।

তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডকে বিডিআর বিদ্রোহ বলবেন না। বিদ্রোহ এ রকম হয় না। এসব কিছুই পূর্বপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। চিফ প্রসিকিউটরের বরাবর অভিযোগ জমা দেওয়ার পর তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এটাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলবেন? এর তদন্ত করলেই সত্যতা বের হয়ে আসবে এবং এটি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। আমরা আজও জানি না কিংবা আমাদের সন্তানরাও জানে না কী কারণে উনাদের হত্যা করা হয়েছে। তাদের হত্যা করার জন্য কোনো একটি কারণ তো থাকতে হবে।

দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব নষ্ট করার জন্যই এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ঘটনা দেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট করার একটি পরিকল্পনা ছিল। আমাদের দেশের তুখোড় কিছু অফিসারদের মেরে তারা শান্ত হয়নি বরং পরিবারের সদস্য ও আশপাশের অনেক সাহসীদেরও হত্যা করেছে। তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর দাবি জানান তিনি।

রাজধানীর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তরে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঘটেছিল দেশের ইতিহাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ড। বিডিআরের বিদ্রোহের নামে ওই সময় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জনকে নৃশংস ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

বিদ্রোহের নামে সংঘটিত ওই ঘটনার প্রকৃত কারণ ও চিত্র উদঘাটনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি পেশার মানুষের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই দাবি জানানো হয়। ওই ঘটনায় হাজারো বিডিআর সদস্য ও বেসামরিক ব্যক্তিদেরকে বিচারের আওতায় আনা হয়। শুরু থেকেই ওই বিচারের নিরপেক্ষতা, উদ্দেশ্য ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন ছিল। বিদ্যমান ফৌজদারি আইনে আনা মামলায় নিম্ন আদালত ও হাইকোর্টেও রায় হয়। এ ঘটনায় আনা দুই মামলার মধ্যে হত্যাযজ্ঞের মামলার বিচার হাইকোর্ট বিভাগে সম্পন্ন হয়েছে। অপরদিকে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা এখনও নিম্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

হত্যাযজ্ঞের মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় দেয় বিচারিক আদালত। এতে ১৫২ জনের ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় ১৬০ জনের। ১০ বছরসহ বিভিন্ন মেয়াদের সাজা হয় ২৫৬ জনের। খালাস পান ২৭৮ জন। বিচারিক আদালতে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি শেষে হাইকোর্টের তিন বিচারপতি সমন্বয়ে বৃহত্তর বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর রায় দেয়। রায়ে ফাঁসি বহাল হয় ১৩৯ জনের। যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। ২২৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। খালাস পান ৪৫ জন। উচ্চ আদালতে খালাস পাওয়া ও সাজা কমা ৮৩ জনের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষ ‘লিভ টু আপিল’ (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করেছে। পাশাপাশি আসামিপক্ষেও ‘লিভ টু আপিল’ দায়ের করা হয়েছে।

দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে বৃহত্তম এই মামলায় বাহিনীর সদস্য ছাড়াও রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আসামি করা হয়েছিল। এ মামলায় বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কারাগারে থাকা অবস্থায় বিএনপি’র এই নেতার মৃত্যু হয়। তাকে মামলায় সম্পৃক্ত করা এবং মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।

Share

Follow us