জুলাইয়ের চেতনা সমুন্নত রাখতে ও সাংবাদিকতার বিকাশে তথ্য মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ
ঢাকা, (১৫ নভেম্বর, ২০২৪), ওপেন প্রেস ডেস্ক/বাসস : তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় অন্তর্র্বতী সরকারের বিগত একশ দিনে সাংবাদিকতার বিকাশ, পতিত ফ্যাসিবাদ, জুলাই বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের চেতনা সমুন্নত রাখতে তথ্যচিত্র নির্মাণ ও সম্প্রচারের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের প্রধান পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে- সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রোধ করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল, সাংবাদিকদের বেতন কাঠামোতে যৌক্তিক সংস্কার আনার পাশাপাশি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো পর্যালোচনা এবং আর্থিক সংকটে থাকা সাংবাদিক, গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের পরিবার ও আহতদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত।
মন্ত্রণালয় গত ১লা জুলাইয়ের পর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা পর্যালোচনার জন্য আট সদস্যের কমিটি গঠনের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদ সাংবাদিকদের তালিকা তৈরি করে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের কাছে পাঠিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট ইতোমধ্যে ৩৫০ সাংবাদিককে ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে এবং সাংবাদিকদের মেধাবী সন্তানদের বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে।
এছাড়া, মন্ত্রণালয় জাতীয় চলচ্চিত্র উপদেষ্টা কমিটি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট বোর্ড, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২৩ প্রদানের জন্য জুরি বোর্ডসহ বেশ কয়েকটি কমিটি পুনর্গঠন করেছে। পাশাপাশি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন বোর্ড ও কিমিটিতে যোগ্য প্রার্থীদের প্রস্তাব করার জন্য একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে।
জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যার মধ্যে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বিএসএস), প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এবং চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর (ডিএফপি) সফলভাবে কিছু অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে। আরো কিছু কর্মসূচি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিভিশন ‘আগামীর বাংলাদেশ’, ‘ফ্যাসিবাদের ডায়েরি’, ‘দমনের গল্প’, ‘শহিদ পরিবারের আর্তনাদ’ ও ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদী সরকারের দমনমূলক কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি ও জুলাই বিপ্লবের ওপর অনুষ্ঠানসহ বেশকিছু তথ্যচিত্র সম্প্রচার করেছে।
দুর্নীতির বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ার চেতনা জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে গণযোগাযোগ বিভাগ মাইকিং, ৫২৭টি তথ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শন, ১১৯টি উঠান বৈঠক ও ১৭৩টি সঙ্গীতানুষ্ঠান আয়োজনের মতো বিশদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
গত ১০০ দিনে বাংলাদেশ বেতারের প্রধান অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্যাসিবাদ ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের ওপর তথ্যচিত্র সম্প্রচার, বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ার বিষয়ক আলোচনা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ওপর সঙ্গীতানুষ্ঠান, মানি লন্ডারিং, বাজার সিন্ডিকেট ও সংস্কারের ওপর জারি গান এবং বিপ্লব পরবর্তী তরুণদের কর্মকাণ্ডের ওপর অন্যান্য অনুষ্ঠান।
রাষ্ট্র পরিচালিত জাতীয় সংবাদ সংস্থা বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) জুলাই গণআন্দোলনে শহিদ ও আহত ব্যক্তিদের নিয়ে ১৪১টি সংবাদ ও ফিচার প্রকাশ করেছে এবং এর সাথে ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদী সরকারের দুর্নীতি, দমন, হত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের ১৪০টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
পিআইবি গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা সম্পর্কিত একটি জার্নাল নিরীক্ষার দুটি সংস্করণ প্রকাশ করবে- যেখানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, প্রধান উপদেষ্টাদের বক্তৃতা এবং মিডিয়া ও সাংবাদিকতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হবে এবং শহিদ ছাত্রদের ওপর ২০টি ফিচার স্টোরি, গ্রাফিতি, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের ভূমিকা প্রকাশ করবে।
বাংলাদেশ সিনেমা অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (বিসিটিআই) মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে ‘বৈষম্যমুক্ত ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে বিসিটিআইয়ের কার্যক্রম’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে।
গণমাধ্যমে বৈষম্য দূর করে সুশাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রেস কাউন্সিলকে আরো কার্যকর, গণমাধ্যম বান্ধব ও বৈষম্যমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল গণমাধ্যম কর্মী ও অংশীজনদের সঙ্গে তিনটি মতবিনিময় সভা করেছে।
তাছাড়া দুর্নীতি, দমন, গুম, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের রাজনীতিকরণ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, নির্বাচনী ব্যবস্থার ধ্বংস, সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসহ ক্ষমতাচ্যুত সরকারের যাবতীয় অপকর্মের তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা বিভাগকে (ডিএফপি) নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।