রাজনীতি

গুমের ঘটনা জাতিসংঘের অধীনে তদন্ত করতে হবে : বিএনপি মহাসচিব

ঢাকা, ওপেন প্রেস ডেস্ক : বাংলাদেশে গত ১৫ বছরের গুমের ঘটনা জাতিসংঘের অধীনে তদন্তের উদ্যোগ নিতে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘এই প্রথম বাংলাদেশে স্বৈরাচারের অপকর্মের তদন্তের জন্য জাতিসংঘ থেকে একটি দল এসেছে এটা প্রাথমিক দল, ফ্যাক্টস এ্যান্ড ফান্ডিং টিম। কিন্তু এদের যে টার্মস অব রেফারেন্স গত দুই মাসে যে হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে সেটা তারা তদন্ত করবে। আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, আপনারা জাতিসংঘের যে মানবাধিকার কমিশন আছে তাদের সাথে কথা বলেন। গত ১৫ বছর ধরে আজ পর্যন্ত যতগুলো মানবতা বিরোধী অপরাধ হয়েছে, হত্যা হয়েছে, গুম হয়েছে প্রত্যেকটির তদন্তের ব্যবস্থা করুন। এটা আপনারা (অন্তর্র্বতীকালীন সরকার) বললে জাতিসংঘ অবশ্যই করবে।’

আজ ৩০ আগস্ট, ২০২৪ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক সংহতি সভায় বিএনপি মহাসচিব এই দাবি জানান। খবর বাসস।

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘকাল রাজনীতিতে আছি, অ্যারেস্ট হওয়া জানতাম, হত্যা করা জানতাম কিন্তু গুম করে দেয়া এটা আমাদের জানা ছিলো না। এই আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে। আজকে অত্যন্ত ভালো কথা যে, অর্ন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গুম বিরোধী জাতিসংঘের যে সনদ রয়েছে, তাতে সই করেছেন।’

প্রত্যেকটি গুম হওয়া ব্যক্তির পরিবারকে ভাতার আওতায় আনার দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গুম ঘটনায় শিকার ব্যক্তিদের সন্ধানে সরকারের তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য আমি অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু আপনারা প্রত্যেকটি গুম হওয়া পরিবারকে ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করেন। কারণ আমরা জানি এখানে অনেক পরিবার আছে যারা অনেক কষ্ট করে তাদের পরিবার চালাচ্ছে, ছেলে-মেয়েদেরকে মানুষ করছে, স্কুল-কলেজে পড়াচ্ছে এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব, এই পরিবারগুলোর পাশে এসে দাঁড়ানো।’

গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের ‘বেদনা-কষ্টে’র সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের কষ্টের কথা বলছে। গুম হওয়া বাবার শিশুকন্যা  সাফা। সে যখন বলছে, আমি আমার বাবার হাত ধরে রাস্তায় হাঁটতে চাই, ঈদের নামাজ পড়তে যেতে চাই তখন পিতা হয়ে আমি কষ্ট সংবরণ করতে পারি না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে তাদের সেই অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। যারা গুম ঘটনার জন্য দায়ী, আমরা তাদের কমবেশি চিনি। যারা দায়িত্বে ছিলেন, র্যাবের দায়িত্বে ছিলেন, পুলিশের বিশেষ বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে, তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা খুব কষ্ট পাই যখন দেখি রাজনৈতিক নেতাদেরকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু ওই সমস্ত ভয়ংকর ব্যক্তি যারা আমাদের হত্যা করেছে, খুন করেছে, গুম করেছে তাদের একজনকেও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আমরা আশা করি, খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেফতার দেখতে পাবো, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দেখতে পাবো। সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ যেন একটা জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়  তার জন্য আমরা কাজ করতে সক্ষম হবো।’

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও ‘সন্তুষ্টির কোনো কারণ’ নেই উল্লেখ করে  বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখনো অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। দেশ-বিদেশে ষড়যন্ত্রের অভাব নেই। ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ পেলে স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর আঘাত করবে। তাই ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করতে হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার জন্য গুম প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। এই প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা, মূল নায়ক শেখ হাসিনা। এই প্রকল্পের যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের স্বরূপ উৎঘাটন করতে হবে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি আজকে খোলাসা করে বলতে চাই, আয়না ঘরের প্রধান খলনায়ক ছিলো বেনজীর ও জিয়াউল আহসান। একজন চাকুরিচ্যুত হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছে। এখানে একজন বলে গেছেন, জিয়াউলকে ইন্টারোগেশন করা হলে সব কিছু বের হয়ে আসবে। আমি তার সাথে সম্পূর্ণ সহমত প্রকাশ করছি।’

গুমের পর ৬১ দিনে ‘আয়না ঘরে’ বন্দি থাকাকালে নির্মম অত্যাচারে বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথাও তুলে ধরেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ।

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির মানবাধিকার কমিটির সদস্য এডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল, গুম হওয়া ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনা, চৌধুরী আলমের মেয়ে খাদিজা আখতার, মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজীদা ইসলাম তুলিসহ গুম হওয়া পরিবারের কয়েকজন সদস্য বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে গুম হওয়া সদস্যদের স্মরণ করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

সংহতি সভায় বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা তাদের কষ্টের আর্তি এই সংহতি সভায় মর্মস্পর্শী ভাষায় প্রকাশ করলে হাজার হাজার নেতা-কর্মী অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন।

আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গুম হওয়া পরিবারের প্ল্যাটফর্ম ‘মায়ের ডাক’ মানববন্ধন করে। এই কর্মসূচিতে অংশ নেন মানবাধিকারকর্মী, রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও নিখোঁজদের স্বজনরা।

Share

Follow us