আইন-আদালত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মূল ভবন ও এজলাস কক্ষের উদ্বোধন

ঢাকা, ওপেন প্রেস ডেস্ক : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নির্মূলে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য সংস্কারকৃত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মূল ভবন ও এজলাস কক্ষের আজ ৭ জানুয়ারি, ২০২৫ মঙ্গলবার উদ্বোধন করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। খবর বাসস।

উদ্বোধনকালে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংস্কারকৃত মূল ভবন ও এজলাস কক্ষ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নতুন যুগের সূচনা হল।’

এসময় প্রধান বিচারপতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে “এই ভূ-খণ্ডের বিচার বিভাগীয় ইতিহাসে ঐতিহাসিক এই স্থাপনাটি ‘ঢাকা হাইকোর্ট’ বা ‘পুরাতন হাইকোর্ট ভবন’ হিসেবে যে মহান ঐতিহ্য ধারণ করে আছে, ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনয়ন, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ও ন্যায়বিচারের শাশ্বত নীতিসমূহের অনুসরণের মাধ্যমে তা নতুন যাত্রায় পূর্ণতা পাবে।”

একজন সাধারণ নাগরিক তার হৃদয় উৎসারিত অকৃত্রিম চেতনাবোধ থেকে সমগ্র জাতির নৈতিক সমর্থনপুষ্ট একটি গণজোয়ার রুখতে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রতি যে প্রত্যাশা রাখেন- প্রধান বিচারপতি অনুরূপ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার, ট্র্যাইব্যুনালের অপর সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামসহ ট্র্যাইব্যুনাল প্রসিকিউটর ও সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রিার কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

১৯০৫ সালে ‘গভর্নর হাউজ’ হিসেবে যাত্রা করা ‘পুরাতন হাইকোর্ট ভবন’টি পাকিস্তান আমল থেকে ‘ঢাকা হাইকোর্ট’ এবং ২০১০ সাল থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। বিচার চলার মধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় শত বছরের পুরোনো ভবন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় ট্রাইব্যুনাল। পুরোনো এই ভবনের পাশেই টিনশেডের স্থাপনা তৈরি করে সেখানে স্থানান্তর করা হয় ট্রাইব্যুনাল ও প্রসিকিউশন। এর পর থেকে নতুন টিনশেড স্থাপনাতেই চলে আসছিল ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচারকাজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রাথমিকভাবে টিনশেড স্থাপনাতে বিচারকাজ শুরু হয়। একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের অবকাঠামো আন্তর্জাতিক মানের করতে পুরোনো ভবনটির সংস্কারে সিদ্ধান্ত নেয় অর্ন্তর্বতী সরকার। অক্টোবর মাসে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পুরোদমে শুরু হয় সংস্কার কাজ। সংস্কার কাজ মনিটরিং-এ কয়েক দফা সরেজমিন পরিদর্শন করেন অর্ন্তর্বতী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভবন উদ্বোধনের সময় গণমাধ্যম কর্মীরা ভিতরে প্রবেশের সুযোগ পান। এ সময় তারা এজলাস কক্ষসহ ট্রাইব্যুনাল ভবনের ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণের সুযোগ পান।  ট্রাইব্যুনাল ভবনের ভেতর থেকে গণমাধ্যম কর্মীরা লাইভেও সম্প্রচার করেন। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আজ এ সূযোগ করে দেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে জুলাই-আগস্টে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত করে। জাজ্বল্যমান এ অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে।

Share

Follow us