মিরাজের ঘূর্ণিতে ২৭৪ রানে অলআউট পাকিস্তান
রাওয়ালপিন্ডি, ওপেন প্রেস ডেস্ক : অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের ঘূর্ণিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৮৫.১ ওভারে ২৭৪ রানে অলআউট হয়েছে স্বাগতিক পাকিস্তান। ৬১ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ। জবাবে দ্বিতীয় দিন শেষে ২ ওভারে বিনা উইকেটে ১০ রান করেছে বাংলাদেশ। ১০ উইকেট হাতে নিয়ে ২৬৪ রানে পিছিয়ে টাইগাররা।
রাওয়ালপিন্ডিতে গতকাল বৃষ্টির কারনে প্রথম দিনের খেলা পরিত্যক্ত হবার পর আজ ৩১ আগস্ট, ২০২৪ শনিবার দ্বিতীয় দিন টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। খবর বাসস।
ইনিংসের প্রথম ওভারে বাংলাদেশের হয়ে বোলিং আক্রমনে আসেন শরিফুল ইসলামের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পাওয়া তাসকিন আহমেদ। ওভারের শেষ বলে পাকিস্তানের ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিককে খালি হাতে বোল্ড করেন ১৪ মাস পর টেস্ট খেলতে নামা তাসকিন। তার ইনসুইং ডেলিভারি শফিকের ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক গলে স্টাম্পে আঘাত হানে। মেডেন উইকেট নিয়ে টেস্টে প্রত্যাবর্তনটা দারুনভাবে করেন তাসকিন।
শুরুর ধাক্কা সামলে উঠতে আরেক ওপেনার সাইম আইয়ুবের সাথে জুটি বাঁধেন পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদ। বাংলাদেশ বোলারদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে অবিচ্ছিন্ন ৯৯ রানের জুটিতে প্রথম সেশন ভালোভাবেই শেষ করেন দু’জনে। এই সেশনে দ্রুত রান তুলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১০ম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন মাসুদ। আইয়ুব ৪৩ ও মাসুদ ৫৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।
দ্বিতীয় সেশনের তৃতীয় ওভারেই আইয়ুব-মাসুদের জুটি ভাঙেন স্পিনার মিরাজ। ২টি চারে ৫৭ রান করা মাসুদকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মিরাজ। রিভিউ নিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেননি মাসুদ। দ্বিতীয় উইকেটে আইয়ুবের সাথে ১০৭ রানের জুটি গড়েন মাসুদ।
অধিনায়ক ফেরার পর টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান আইয়ুব। কিছুক্ষণ বাদে সেট ব্যাটার আইয়ুবকে বড় শট খেলার জন্য বেশ ঝুলিয়ে একটি ডেলিভারি দেন মিরাজ। ক্রিজ ছেড়ে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে স্টাম্পিং হন আইয়ুব। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৮ রান করে মিরাজের শিকার হন আইয়ুব।
বিরতির পর মিরাজের জোড়া আঘাতে ম্যাচে ফেরার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। সেই সুযোগকে ভালোভাবে কাজে লাগান তাসকিন ও আরেক স্পিনার সাকিব আল হাসান।
সৌদ শাকিলকে ব্যক্তিগত ১৬ রানে বোল্ড করেন তাসকিন। চা-বিরতির আগ মুর্হূতে পাকিস্তানকে বড়সড় ধাক্কা দেন সাকিব। আর্ম বল ডেলিভারিতে বাবর আজমকে ৩১ রানে লেগ বিফোর আউট করেন সাকিব। রিভিউর সুযোগ থাকলেও সেটি নেননি বাবর।
বাবরের বিদায়ে ক্রিজে আসেন আঘা সালমান। সাকিবের দুই ডেলিভারি স্বাচ্ছেন্দ্যে খেললেও তৃতীয় ডেলিভারিতে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান সালমান। শর্ট লেগে সালমানের ক্যাচ ফেলেন জাকির হাসান। জীবন পেয়ে উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়ে দ্বিতীয় সেশন শেষ করেন সালমান। এই সেশনে ৮৪ রানে পাকিস্তানের ৪ উইকেট নিয়ে দারুণভাবে লড়াইয়ে ফিরে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় সেশনের শুরু থেকে জুটি গড়ার চেষ্টায় রানের চাকা সচল করেন রিজওয়ান ও সালমান। দলের রান ২’শও পার করেন তারা। কিন্তু এই জুটিতে বড় হতে দেননি পেসার নাহিদ রানা। অফ-স্টাম্পের বাইরে রানার দুর্দান্ত এক বাউন্সার ঠিকঠাক খেলতে না পেরে প্রথম স্লিপে শান্তকে ক্যাচ দেন ২৯ রান করা রিজওয়ান।
সপ্তম উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন সালমান ও খুররাম শাহজাদ। জুটিতে ২৫ রান যোগ হবার পর আঘাত হানেন মিরাজ। ব্যক্তিগত ১২ রানে মিড অফে সাকিবকে ক্যাচ দেন শাহজাদ।
নতুন ব্যাটার হিসেবে ক্রিজে এসে ৭৯তম ওভারে সাকিবের বলে মোমিনুল হককে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান মোহাম্মদ আলি। তবে পরের ওভারে মিরাজের বলে প্রথম স্লিপে সাদমান ইসলামকে ক্যাচ দিয়ে ২ রানে সাজঘরে ফিরেন আলি। ২৪৬ রানে অষ্টম উইকেট হারায় পাকিস্তান। এ অবস্থায় রানের গতি বাড়ান সালমান। ৮৫তম ওভারে তাসকিনকে ছক্কা মেরে টেস্ট ক্যারিয়ারের সপ্তম অর্ধশতক পূর্ণ করেন তিনি। ঐ ওভারের শেষ বলে স্কয়ার লেগে বাউন্ডারি সীমানায় সাকিবের দারুণ ক্যাচে আউট হন সালমান। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৪ রান করেন সালমান। পরের ওভারের প্রথম বলে আবরার আহমেদকে ৯ রানে শিকার করে পাকিস্তানের ইনিংস ২৭৪ রানে শেষ করেন মিরাজ। সেই সাথে ইনিংসে ৬১ রানে ৫ উইকেট নেন মিরাজ। ৪৫ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে দশম এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে ইনিংসে প্রথমবারের মত পাঁচ উইকেট নিলেন মিরাজ। এছাড়া তাসকিন ৩টি, সাকিব ও রানা ১টি করে উইকেট নেন।
পাকিস্তানের ইনিংস শেষ হবার পর দিনের শেষভাগে ২ ওভার ব্যাট করার সুযোগ পায় বাংলাদেশ। পেসার মির হামজার করা প্রথম ওভারের প্রথম বলে ক্যাচ দিয়ে জীবন পান সাদমান। এরপর বাকী সময় কোন বিপদ হতে দেননি সাদমান ও জাকির। সাদমান ৬ ও জাকির শূন্য রানে অপরাজিত আছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর : (দ্বিতীয় দিন শেষে)
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস : ২৭৪/১০, ৮৫.১ ওভার (আইয়ুব ৫৮, মাসুদ ৫৭, সালমান ৫৪, মিরাজ ৫/৬১, তাসকিন ৩/৫৭)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ১০/০, ২ ওভার (সাদমান ৬*, জাকির ০*)।