আর্ন্তজাতিক

রাফাহ হামলা নিয়ে বৈঠকে বসছে নিরাপত্তা পরিষদ

রাফাহ, ফিলিস্তিনি অঞ্চল, (২৮ মে, ২০২৪), ওপেন প্রেস ডেস্ক/বাসস ডেস্ক : রাফাহতে বাস্তুচ্যুত লোকদের একটি আশ্রয় শিবিরে ইসরায়েলি হামলায় অনেক ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মঙ্গলবার একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছে। এই বৈঠকে তিনটি ইউরোপীয় দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।

মঙ্গলবার ভোরে ঘটনাস্থল থেকে এএফপি সাংবাদিকরা দক্ষিণ গাজা সীমান্ত শহর রাফাহতে গতরাতে নতুন করে ইসরায়েলি হামলার খবর দিয়েছে। যেখানে রোববার রাতে হামাসের দুই সিনিয়র সদস্যকে লক্ষ্য করে একটি ইসরায়েলি হামলা আগুনের সূত্রপাত করে যা বাস্তুচ্যুতদের একটি আশ্রয় কেন্দ্রের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে এতে ৪৫ জন নিহত হয়েছে।

এই হামলা আন্তর্জাতিক নিন্দার ঝড় তুলেছে। ফিলিস্তিনিরা এবং অনেক আরব দেশ এই হামলাকে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছে। ইসরায়েল বলেছে, তারা ‘মর্মান্তিক দুর্ঘটনা’ খতিয়ে দেখছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন, ‘গাজায় কোনো নিরাপদ স্থান নেই। এই ভয়াবহতা অবশ্যই থামাতে হবে।’

জাতিসংঘের মানবিক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস রাফাতে ইসরায়েলের অনুপ্রবেশের আগে প্রচারিত বেসামরিক মৃত্যুর ব্যাপক সতর্কতার দিকে ইঙ্গিত করে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘গত রাতের সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য আক্রমণের পরিণতি আমরা দেখেছি।’

তিনি বলেন, ‘এটিকে ‘ভুল’ বলা একটি বার্তা যার অর্থ হলো যারা নিহত, শোকাহত এবং যারা জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছেন তাদের জন্য কিছুই নয়।’

কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, হামলার বিষয়ে আলোচনার জন্য আলজেরিয়ার ডাকা জরুরি অধিবেশনের জন্য মঙ্গলবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠকে বসবে।

ইইউ-এর পররাষ্ট্র নীতির প্রধান বলেছেন, তিনি এই হামলার ‘সংবাদে আতঙ্কিত’ হয়েছেন। অন্যদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, তিনি ‘ক্ষুব্ধ’ এবং মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একজন মুখপাত্র বলেছেন ইসরায়েলকে ‘বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য সম্ভাব্য সব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে’।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা তদন্ত শুরু করছে।

বাস্তুচ্যুত গাজান খলিল আল-বাহতিনি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি সোমবার এএফপি’কে বলেছেন, ‘গত রাতে আমাদের তাঁবুর বিপরীতে টার্গেট করা হয়েছিল’।

‘আমরা আমাদের সমস্ত জিনিসপত্র জড়ো করেছি, কিন্তু কোথায় যেতে হবে তা আমরা জানি না।’

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পার্লামেন্টে বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য ‘আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও’ মৃত্যু ঘটেছে।

স্পেন, আয়ারল্যান্ড এবং নরওয়ে মঙ্গলবার একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এই হামলা আরো ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতির ঘোষণাকে ইসরায়েল হামাসের জন্য ‘পুরস্কার’ হিসাবে নিন্দা জানানোর পর এই হামলা চালানো হলো।

স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস সোমবার ব্রাসেলসে বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি ন্যায়বিচারের জন্য ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন,এটি ছিল ‘ইসরায়েলের জন্য নিরাপত্তার সর্বোত্তম গ্যারান্টি এবং এই অঞ্চলে শান্তিতে পৌঁছানোর জন্য একেবারে অপরিহার্য’। এ সময় তাঁর পাশে আইরিশ এবং নরওয়েজিয়ান সমকক্ষ উপস্থিত ছিলেন।  ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সোমবার বলেছেন, তিনি জেরুজালেমে স্পেনের কনস্যুলেটকে ‘প্রাথমিক শাস্তিমূলক’ ব্যবস্থা হিসাবে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের জন্য ১ জুন থেকে কনস্যুলার পরিষেবা বন্ধ করে দিতে বলেছেন।

হামাস তেল আবিব এলাকায় রকেট হামলা চালানোর কয়েক ঘণ্টা পর রোববার গভীর রাতে রাফাহতে ইসরায়েল মারাত্মক হামলা চালায়। তেল আবিব হামাসের হামলার বেশিরভাগই আটকে দেয়।

ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, তাদের বিমান শহরে ‘হামাসের একটি কম্পাউন্ডে আঘাত হানে’ এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা ইয়াসিন রাবিয়া এবং খালেদ নগরকে হত্যা করেছে।

গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি বলেছে, হামলায় আগুন প্রজ্জ্বলিত করেছে যা উত্তর-পশ্চিম রাফাহতে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর একটি আশ্রয় কেন্দ্রে ছড়িয়ে পড়ে।

বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মুগাইয়ের বলেন, ‘আমরা পোড়া মৃতদেহ এবং টুকরো টুকরো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেখেছি। আমরা অঙ্গচ্ছেদ, আহত শিশু, নারী ও বয়স্কদের হতাহতের ঘটনাও দেখেছি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক মহিলা বলেন, ‘আমরা একটি বিকট শব্দ শুনেছি এবং আমাদের চারপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। শিশুরা চিৎকার করছিল।’

ইসরায়েল তার রাফাহ স্থল অভিযান শুরু করার পর থেকে ইতোমধ্যেই উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসরায়েলি এবং মিশরীয় সামরিক বাহিনীর মধ্যে সোমবার মিশর এবং দক্ষিণ গাজা উপত্যকার মধ্যবর্তী সীমান্ত এলাকায় একটি ‘গুলি বিনিময়ের ঘটনা’ ঘটেছে। এতে একজন মিশরীয় সীমান্তরক্ষী নিহত হয়েছে। উভয় বাহিনী জানিয়েছে, তারা ঘটনা তদন্ত করছে।

ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ফুটেজে প্যারামেডিকদের আক্রমণের জায়গায় দৌঁড়ানোর এবং আহতদের সরিয়ে নেওয়ার বিশৃঙ্খল রাতের দৃশ্য দেখানো হয়েছে।

মুগাইয়ের বলেন, যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি এবং ইসরায়েলের অবরোধের প্রভাবের কারণে উদ্ধার প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়েছে, যার ফলে জ্বালানি এবং ‘আগুন নিভানোর জন্য পানির’ তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় মিশর এবং কাতার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। উভয়ই একটি যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি-বন্দি বিনিময় আলোচনার প্রচেষ্টায় মধ্যস্থতাকারী হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

মিশর এই হামলাকে ‘অরক্ষিত বেসামরিক লোকদের লক্ষ্যবস্তু’ বলে অভিহিত করে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, গাজাকে পরিকল্পিতভাবে বসবাসের অযোগ্য করে তোলার অংশ হিসেবে ‘গাজা উপত্যকায় মৃত্যু ও ধ্বংসের পরিধিকে বাড়াতে এই হামলা চালানো হয়।’

কাতার ‘আন্তর্জাতিক আইনের বিপজ্জনক লঙ্ঘনের’ নিন্দা করেছে এবং ‘উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, বোমা হামলা চলমান মধ্যস্থতা প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলবে।’

শীর্ষ আন্তর্জাতিক আদালত, ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস শুক্রবার ইসরায়েলকে রাফাহ এবং অন্য কোথাও যে কোনও আক্রমণ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে যা ফিলিস্তিনিদের ‘শারীরিক ধ্বংস’ ঘটাতে পারে।

Share

Follow us