জাতীয়

আওয়ামী লীগকে ভয় দেখিয়ে বিএনপির লাভ হবে না : প্রধানমন্ত্রী

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে  বলেছেন, আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে বিএনপির কোনো লাভ হবে না। বিএনপি সরকারের পতন ঘটাবে ব’লে, নানারকম আন্দোলনের হুমকি দেয়। আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের হুমকি ও ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।
প্রধানমন্ত্রী আজ ২৮ অক্টোবর ২০২৩ দুপুরে  চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত  চট্টগ্রামের আনোয়ারার কেইপিজেড মাঠে দেশের প্রথম কর্ণফূলী নদীর নিচ দিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন উপলক্ষে মহাসমাবেশে এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে বাংলাদেশকে আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছে। বরং খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে ভোট চুরি করেছিলো বলেই বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন করে তাদের ক্ষমতা থেকে হটিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওরা ভোট চোর, জনগণের অর্থ চোর, বিএনপি-জামায়াত মানেই হচ্ছে খুনি, সন্ত্রাসি ও জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী।
আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়নে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ এই বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না, এটা হলো বাস্তবতা। ’৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে তিনি বলেন, বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। কিন্তু তাদের হত্যার বিচার চাওয়ার কোনো অধিকর আমার ছিলো না। কারণ, জিয়া, ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে বিচারের পথকে রুদ্ধ করে রেখেছিলো। খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে ঐ খুনিদের ক্ষমতায় বসিয়েছিলো।
’৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হ’য়ার পর একরকম জোর করে প্রবাস জীবন দেকে দেশে ফিরে আসার প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এসেছি এমন একটা সময় যখন ঐ খুনীদের দল, যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায়। বারংবার আমার ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্রগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে আমার ওপর গুলি বর্ষণ করা হয়েছিলো। আপনাদের মনে আছে, ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী মারা গেছেন। এরপরও বারবার বাঁধা পেলেও নিজের জীবনের মায়া করিনি। একটা কথাই শুধু ভেবেছি বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা সারাজীবন কষ্ট করেছেন, জেল-জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন এবং জীবনটাও দিয়ে গেছেন। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করবো। এদেশের কোনো মানুষ না খেয়ে কষ্ট পাবে না, ভূমিহীন থাকবে না, রোগে কষ্ট পাবে না। সে জন্য প্রত্যেক ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছি। প্রত্যেক ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার সব রকমের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। কাজেই আমার একটাই কাজ দেশের মানুষের কল্যাণ করা। আর কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। শুধু আপনাদের দোয়া চাই।

সরকার প্রধান আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় পুনরায় ভোট প্রত্যাশা করে বলেন, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে কর্নফূলী টানেল পেয়েছেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের সুফল পাচ্ছেন। কাজেই আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা আমাদের আবারো সেবা করার সুযোগ দেবেন কি-না, হাত তুলে ওয়াদা করুন। এসময় উপস্থিত জনতা সমম্বরে চিৎিকার করে দুই হাত তুলে নৌকায় ভোট দানের প্রতিশ্রুতি দেন।

প্রধানমন্ত্রী সকলের দোয়া চেয়ে বলেন, দোয়া করবেন এই উন্নয়নের ধারা যেনো ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকে। ঐ লুটেরা সন্ত্রাসীদের হাতে দেশ যেনো  না পড়ে।

প্রধানমন্ত্রী আজ সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে কর্ণফুলীর উত্তর তীরে পতেঙ্গায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ এর ফলক উন্মোচন করেন এবং নগরীর পতেঙ্গাকে আনোয়ারা উপজেলার সঙ্গে সংযোগকারী এই টানেলের ভেতর দিয়ে প্রথম যাত্রা করেন। এরপর  টানেল অতিক্রম করেন এবং নদীর দক্ষিণ তীরে আনোয়ারায় তাঁর মোটরযানের টোল পরিশোধ করেন। পরে কেইপিজেড মাঠে সমাবেশে যোগ দেন তিনি। ১০,৬৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সংযোগ সড়কসহ ৯.৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেল সোমবার সকাল ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী একই অনুষ্ঠানে  আরো ১১টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৬টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি প্রথম পানির নিচের সড়ক টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে ডাক বিভাগ প্রকাশিত একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম এবং বিশেষ সীলমোহরও অবমুক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত একাট ৫০ টাকা মূল্যমানের স্মারক নোটও অবমুক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ভূমিমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ দক্ষিণ এর সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন। এতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং প্রেরিত শুভেচ্ছাবার্তাটি চীনের রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন এবং পড়ে শোনান। এর অনুবাদটি পাঠ করেন সেতু বিভাগের সচিব। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং বার্তায় বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার উচ্চমানের বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতার সাক্ষর বহনকারি একটি প্রকল্প এবং দুটি দেশের মধ্যে পারষ্পরিক লাভজনক সহযোগিতার আরেকটি অনন্য দৃষ্টান্ত। এই টানেল স্থানীয় যান চলাচল পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটাবে এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে চট্টগ্রামবাসীর আবদান স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে- উল্লেখ করে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলো চট্টগ্রামবাসীর জন্য তাঁর উপহার বলেও জানান। পলি পড়ে কর্ণফূলীর তলদেশ যেন ভরাট না হয়ে যায়, সেজন্যই তাঁর সরকার টানেল করার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই টানেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম নয়, বরং সমগ্র বাংলাদেশের যোগাযোগ ও আমাদের আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি বিরাট ভূমিকা রাখবে। এখন আর এখান থেকে কক্সবাজার যেতে বেশি সময় লাগবে না। ঢাকা থেকে যাত্রার সময় চট্টগ্রাম শহরকে বাইপাস করে যাওয়া যাবে। শহরে ঢুকে আর যানজটে পড়তে হবে না। তাছাড়া এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে আমরা সংযুক্ত হব- যা উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে।

সরকার প্রধান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় এতো বড় টানেল এটাই প্রথম। এজন্য তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিংকে ধন্যবাদ জানান। কারণ চীন সফরে এই টানেল নির্মাণের জন্য তিনি চীনকে অনুরোধ করলে তারা রাজি হয়ে যায়।
চট্টগ্রামের উন্নয়নে তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনটি মেট্রো রেল নির্মাণেও সমীক্ষা চলছে। আগামীতে আমরা চট্টগ্রামে মেট্রোরেলও করে দেবো।

এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-কক্সবাজার হাইওয়ে ৬ লেনে উন্নয়ন, লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা প্রায় ১৬ কি.মি. এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বিভিন্ন ফ্লাইওভার, চট্টগ্রাম-মিরেরসরাই-আনোয়ারা ও মহেশখালীতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, ডিপ সী পোর্ট, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ, চাকতাই-কালুরঘাট আউটার নেট ড্রাইভ চার লেন, মিরেরসরাই থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ পর্যন্ত ২৫০কি.মি. দৈর্ঘ্যরে বিশ্বের অন্যতম মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করা হচ্ছে এবং চট্টগ্রাম বন্দরে বে-টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, নগরবাসীর জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা এবং চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও এই সরকারই করে দিয়েছে। ১৮টি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ৩৫টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাইটেক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, ইনকিউবেশন সেন্টার, ট্রেনিং সেন্টার এবং খুব তাড়াতাড়ি দোহাজারি-রামু-কক্সবাজার রেলের কাজও শেষ হবে এবং এশিয়ান রেললাইনের সঙ্গে যুক্ত হবে। শীগ্রই তিনি এই রেললাইন উদ্বোধন করবেন- যার বিস্তার রাঙ্গমাটি পর্যন্ত করার চিন্তাও সরকারের রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রাম হচ্ছে আমাদের বাণিজ্য রাজধানী। সেই হিসেবেই চট্টগ্রামকে আমরা তৈরী করে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, আপনারা গত নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই আজকে এতো উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। কারণ এই নৌকা মার্কা যখনই সরকারে এসেছে, তখনই দেশের মানুষের উন্নয়ন হয়েছে। আগে এই চট্টগ্রামে ছিলেঅ সন্ত্রাসের রাজত্ব। সেখান থেকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চট্টগ্রামকে আমরা গড়ে তুলে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তথ্যসূত্র: বাসস

Share

Follow us