বাক স্বাধীনতার অন্যায় ব্যবহার গুজব সৃষ্টি করে : অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরমানি
রওশন ঝুনু, ঢাকা : বাক স্বাধীনতাকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে ফেইক নিউজ বা গুজব সৃষ্টি করা হয়ে। প্রযুক্তির এই যুগে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে যেভাবে বাক স্বাধীনতার নামে গুজব ছড়ানো হয় তা প্রতিরোধের জন্য আমাদের নিজেদের চিন্তাশক্তিকে ব্যবহার করে সমাজে সচেনতা সৃষ্টি করতে হবে।
আজ ২৮ অক্টোবর ২০২৩ শনিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা ‘এলকপ’ আয়োজিত “ফেইক নিউজ যা মহামারির চেয়েও দ্রুত ছড়ায়:এক নতুন চ্যালেঞ্জ”শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরমানি এসব কথা বলেন।
এলকপ-এর চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান ছিলেন সভাপ্রধান। স্বাগত বক্তব্যে ড. মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনা থেকে রটনা তৈরি হয়। ফেইক নিউজ যেভাবে আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়ছে তা রোধ করা না গেলে, দেশে আরও অরাজকতার সৃষ্টি হবে।
ফেইক নিউজ সম্পর্কিত মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, এলকপ-এর রিসার্চ কনসালটেন্ট অরুপ রতন সাহা। তিনি তার প্রতিবেদনে ফেইক নিউজ কী এবং অনলাইন মাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করে এই ফেইক নিউজ কীভাবে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে, তা চিহ্নিত করেছেন। তিনি আরও আলোচনা করেন কিভাবে ফেইক নিউজ গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও প্রতিষ্ঠানের উপর আস্থা কমিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। তিনি ফেইক নিউজের কিছু উদাহরন তুলে ধরেন, যার মধ্যে ২০১২ সালের রামুর ঘটনা উল্লেখ করা হয়। এই বর্বরোচিত ঘটনাটিড় সূত্রপাত হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশিত একটি ছবির মাধ্যমে, যা ছড়িয়ে পড়ার পর রামু বৌদ্ধ বিহারসহ আশে পাশের অনেক বৌদ্ধ ঘর বাড়ি পুড়িয়ে ফেলা হয়। ফেইক নিউজ প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাগুলো তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহা পরিচালক ম হামিদ, ইন্ডিয়ান ল ইন্সটিটিউট- এর জ্যেষ্ঠ প্রফেসর এস সিভাকুমার, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদস্য অ্যারোমা দত্ত।
মুক্ত আলোচনা অধিবেশনে, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং মানবাধিকার কর্মীরাপ্রাণবন্ত অংশগ্রহণ করেন।
মুক্ত আলচনায় অ্যারোমা দত্ত বলেন, ফেইক নিউজ বৈশ্বিক শান্তি, সম্প্রীতি বিনষ্টের প্রধান হাতিয়ার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে ফেইক নিউজ বা গুজব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। গুজব প্রতিরোধে আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি এই বিষয়ে আলোচনা করতে সকলকে আহ্বান জানান।
*ম হামিদ বলেন, শুধুমাত্র সাংবাদিকতার মাধ্যমে গুজব ছড়ায় এমনটি নয়, আমরা নিজেরাই গুজবের লেখক। আমাদেরকে সচেতন হতে হবে এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় গুজব ছড়ানো বন্ধ করতে হবে।
*প্রফেসর এস. শিভাকুমার ফেইক নিউজ বা গুজব ছড়িয়ে পড়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন যার মধ্যে হলুদ সাংবাদিকতা অন্যতম। ফেইক নিউজ বা গুজবের বিষয়ে শুধু আইন করলে হবে না বরং সকলকে এই বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে বলে উল্লেখ করেন।
*জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সেলিম সামাদ গুজবের কারণে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো উল্লেখ করেন এবং এগুলো প্রতিরোধে সকলকে আরও সচেতন হতে বলেন।
* সিনিয়ির অ্যাসিস্ট্যান্ট জজ কনক বড়ুয়া বলেন, বিটিআরসি-কে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে গুজব প্রতিরোধে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কার্যক্রম তদারকির আওতাভুক্ত করতে হবে।
* বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বড়ুয়া বাবরি মসজিদ, শাখারি বাজার এবং নাসিমনগরের ঘটনা উল্লেখ করেন এবং আরও বলেন এই ফেইক নিউজের হাত থেকে আমাদের জাতীয় চার নেতাও মুক্তি পাননি। তাদেরকে নিয়েও অনেক ধরণের গুজব ছড়ানো হয়।
* ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ডিন ডঃ রহমতউল্লাহ বলেন, তিনি নিজেই ‘ফেইক নিউজের’শিকার যার সমাধানের জন্য তাকে কোর্ট পর্যন্ত যেতে হয়েছে। তিনি আইনের ফাঁকফোকরগুলোকে সংস্কার করার আহ্বান জানান।
* জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর এস এম মাসুম বিল্লাহ বলেন, ফেইকএবং সংবাদ (নিউজ) শব্দ দুইটি পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। সংবাদের মাধ্যম যাচাই না করে অন্ধবিশ্বাস করা যাবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
*জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর এস এম মাসুম বিল্লাহ বলেন, ফেইকএবং সংবাদ (নিউজ) শব্দ দুইটি পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। সংবাদের মাধ্যম যাচাই না করে অন্ধবিশ্বাস করা যাবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
*ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রাজ্জাক ফেইক নিউজেরEmpowerment through Law of the Common People (ELCOP) কিছু উদাহরন দিয়ে বলেন, এই ধরণের বক্তব্য দেশে শুধুমাত্র অরাজকতা সৃষ্টির জন্য ছড়ানো হয়ে থাকে।
মুক্ত আলোচনা পর্ব শেষে ড. মিজানুর রহমান বলেন, প্রযুক্তি শুধুমাত্র ইতিবাচক উন্নয়ন সাধন করেছে এমন নয় বরং এর নেতিবাচক প্রভাবও ব্যাপক। যারা গুজব ছড়ায় তাদেরকে শক্ত হাতে প্রতিবাদ করতে হবে।গুজব যতো দ্রুত ছড়ায় তার থেকেও দ্রুত সত্যকে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ সত্যই সর্বোত্তম এবং সকল সমস্যার সমাধান। Empowerment through Law of the Common People (ELCOP)
পরিশেষে, এলকপ-এর নির্বাহী পরিচালক, ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল, জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের নিরাপদে বসবাসের জন্য দেশকে একটি উন্নত স্থান হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে, সেমিনারে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।