বঙ্গোপসাগরের সম্ভাবনা উন্মোচনে শান্তি ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন গুরুত্বপূর্ণ : তৌহিদ
ঢাকা, ওপেন প্রেস ডেস্ক : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বঙ্গোপসাগরের সম্ভাবনা উন্মোচনের জন্য মিয়ানমারে শান্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেছেন, গৃহযুদ্ধ-জর্জরিত প্রতিবেশী দেশটিতে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় এর রাখাইন রাজ্যে টেকসই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অপরিহার্য।
আজ ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, রোববার রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড র্স্ট্যাটেজিক স্টাডিজে (বিআইআইএসএস) ‘রিকানেক্টিং দ্য বে অব বেঙ্গল রিজিয়ন: এক্সপ্লোরিং দ্য কনভারজেন্স অব ইন্টারেস্ট’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। খবর বাসস।
তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমারে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমার ও এই অঞ্চলে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বঙ্গোপসাগরের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে মিয়ানমারসহ সমুদ্র উপকূলীয় রাজ্যগুলোতে শান্তি ও সম্প্রীতি অপরিহার্য।
মিয়ানমারে বর্তমানে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত সাত বছরে চরম নৃশংসতার শিকার হয়ে রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
তৌহিদ আরও বলেন, ‘তাদের প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি হয়নি এবং একটি অ-রাষ্ট্রীয় পক্ষ, আরাকান আর্মি বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের সমগ্র সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।’
থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাংককে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় তার সাম্প্রতিক উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে তৌহিদ বলেন, তিনি তাদের সতর্ক করেছেন যে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন ছাড়া সেখানে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে না।
গত বৃহস্পতিবার ওই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিয়ানমার ও লাওসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভারতের পররাষ্ট্র সচিবও যোগ দেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা মিয়ানমার ও আঞ্চলিক শক্তির দায়িত্ব।’
বাংলাদেশে জাপান দূতাবাসের পৃষ্ঠপোষকতায় বিআইআইএসএস এবং ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপিং ইকোনমিস (আইডিই-জেট্রো) যৌথভাবে সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। বিআইআইএসএস(বিস)-এর চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত গাউসুল আজম সরকারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইফতেখার আনিস।
বঙ্গোপসাগর প্রসঙ্গে তৌহিদ বলেন, ‘অতএব, আমাদের সম্মিলিত কাজ হল বিভিন্ন স্বার্থকে একত্রিত করে নিশ্চিত করা যে, বঙ্গোপসাগর সংঘর্ষের পরিবর্তে যেন সহযোগিতার একটি অঞ্চলে পরিণত হয় এবং বিবাদের পরিবর্তে যেন এটি সংযোগের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে।’ তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগর তার বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ, গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুট ও অর্থনৈতিক একীকরণের সম্ভাবনাসহ ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
বঙ্গোপসাগর প্রসঙ্গে তৌহিদ বলেন, ‘অতএব, আমাদের সম্মিলিত কাজ হল বিভিন্ন স্বার্থকে একত্রিত করে নিশ্চিত করা যে, বঙ্গোপসাগর সংঘর্ষের পরিবর্তে যেন সহযোগিতার একটি অঞ্চলে পরিণত হয় এবং বিবাদের পরিবর্তে যেন এটি সংযোগের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে।’ তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগর তার বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ, গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুট ও অর্থনৈতিক একীকরণের সম্ভাবনাসহ ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শক্তিগুলো এখন বঙ্গোপসাগরের দিকে গভীর মনোনিবেশ করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানগুলো প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার চালিকাশক্তি হিসেবে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
বঙ্গপোসাগরকে সংযোগ, বাণিজ্য ও সংস্কৃতির ঐতিহাসিক বন্ধন হিসেবে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে বৈশ্বিক অর্থনীতির সামুদ্রিক সংযোগ হিসেবে অপরিসীম কৌশলগত গুরুত্ব বজায় রেখে চলেছে। তিনি এটিকে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য একটি মডেলে পরিণত করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করে, একীভূত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে ও উদ্ভাবনী পন্থা অবলম্বন করে আমরা এ অঞ্চলের বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সমস্ত অংশীজনদের উপকৃত করতে ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সমৃদ্ধি রেখে যেতে পারি।’
উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ তার কৌশলগত অবস্থান ও ক্রমবর্ধমান শিল্প ভিত্তিসহ একটি আঞ্চলিক ট্রানজিট হাব এবং এটি বৈশ্বিক মূল্য-শৃঙ্খলের অন্যতম প্রধান নিয়ামক হওয়ার জন্য প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘এ সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগানোর জন্য, বাংলাদেশকে অবশ্যই চাপ কাটিয়ে উঠে উদীয়মান সুযোগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।’
তিনি স্বীকার করেন যে, জাপানের ‘বে অফ বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভ্যালু চেইন’ এর মত উদ্যোগগুলো বিনিয়োগ, প্রযুক্তি ও শ্রম ব্যবহার করে এই রূপান্তর অর্জনের জন্য একটি ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করেছে। উপদেষ্টা বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপানের সামগ্রিক উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকেই শক্তিশালী করছে না, অধিকন্তু এটি অধিকতর আন্তঃসংযুক্ত ও সমৃদ্ধ বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের পথ প্রশস্ত করছে।
বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে এ অঞ্চলের দীর্ঘমেয়াদী সমৃদ্ধির জন্য জলবায়ু পরিবর্তন, অবৈধ মৎস্য শিকার ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তৌহিদ বলেন, বঙ্গোপসাগর অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত উভয় দিক থেকেই সম্পদের এক ভান্ডার।