অর্থনৈতিক উন্নয়নের হাই-রোডে ওঠার জন্য কাঠামোগত রূপান্তরের পরবর্তী ধাপ জরুরি
ঢাকা, ওপেন প্রেস ডেস্ক : এলডিসি থেকে উত্তরণ পরবর্তী সময়ে রপ্তানি প্রতিযোগিতা বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশকে অবশ্যই গুণগতমান বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মান মেনে চলার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এলডিসি থেকে উত্তরণ সংক্রান্ত জাতীয় কৌশলপত্রে এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, রপ্তানিমুখী গার্মেন্ট ও সুরক্ষিত আমদানি-প্রতিযোগী খাত এবং কম মজুরি ও ন্যূনতম বিধি বিধানের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক মডেল শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
‘স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি (এসটিএস)’ শিরোনামের কৌশলপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, হাই-রোড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট বিবেচনা করার জন্য কাঠামোগত রূপান্তরের পরবর্তী ধাপটি জরুরি।
আজ ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের জাতীয় মসৃণ রূপান্তর কৌশলের ন্যায্যতা বিষয়ক কর্মশালা’য় কৌশলটির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। খবর বাসস।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক বিভাগ (ইউএন ডিসা) যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফী সিদ্দিকী, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, প্রধান সমন্বয়কারী (এসডিজি) লামিয়া মোর্শেদ এবং বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গুয়েন লুইস।
জাতিসংঘের উন্নয়ন নীতি সংক্রান্ত কমিটির সদস্য ট্যাফেরে টেসফাচু অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী।
অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং দেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য প্রস্তুত করতে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের ওপর জোর দেন। তিনি এলডিসি গ্রাজুয়েশনকে টেকসই করতে ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন।
প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী তার বক্তৃতায় বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের দিকে বাংলাদেশের যাত্রায় অর্ন্তর্র্বতী সরকারের সংস্কার কর্মসূচিকে স্বীকৃতি ও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া স্থানীয় পণ্যের প্রতিযোগিতা বাড়াতে ব্যবসায়িক পরিবেশ সহজীকরণ, শুল্ক পদ্ধতি সহজীকরণ এবং প্রযুক্তিগত মানোন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।
প্রধান সমন্বয়কারী (এসডিজি) লামিয়া মোরশেদ বলেন, মসৃণ উত্তরণ কৌশল এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার সাথে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন রোডম্যাপকে সমন্বিত করার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে।
ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এসটিএস কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার ওপর জোর দেন।
জাতিসংঘের উন্নয়ন নীতি বিষয়ক কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশের জন্য র্যাপোর্টার ট্যাফেরে টেসফাচিউ বলেন, বাংলাদেশ অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য রোল মডেল হতে পারে।
বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস বলেছেন, ব্যবসার জন্য একটি সক্ষম পরিবেশ তৈরি করে, উৎপাদনশীল সক্ষমতার উন্নতি ঘটিয়ে, মানব পুঁজিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলার মাধ্যমে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সুযোগগুলোতে সর্বাধিক সুফল অর্জন করা যেতে পারে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপির প্রকল্প পরিচালক এ.এইচ.এম.জাহাঙ্গীর।
লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর এবং জাইকা বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহাইড প্যানেল আলোচক হিসেবে কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় এসটিএসের জাতীয় পরামর্শক ড. এম. এ. রাজ্জাক এসটিএসের চূড়ান্ত খসড়ার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন।
উলে¬খ্য, বাংলাদেশ পাঁচ বছরের প্রস্তুতিমূলক সময়ের পরে ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর এলডিসি মর্যাদা থেকে উত্তরণের অপেক্ষায় রয়েছে।
জাতিসংঘের সুপারিশ অনুযায়ী, উত্তরণের পর্যায়ে এলডিসি দেশে তার উন্নয়ন ও ব্যবসায়িক অংশীদারদের সহযোগিতায় এবং জাতিসংঘের ব্যবস্থার অধীনে লক্ষ্যযুক্ত সহায়তার সাথে প্রস্তুতিমূলক সময়কালে একটি জাতীয় মসৃণ রূপান্তর কৌশল (এসটিএস) প্রস্তুত করা জরুরি।
বাংলাদেশ সম্প্রতি ইউএন ডিসা’র সহযোগিতায় এসটিএস প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, এসটিএস-এর চূড়ান্ত খসড়া এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বিষয়ে অবহিতকরণ ও যাচাই এবং তাদের মতামত ও সুপারিশ গ্রহণের লক্ষ্যে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
এসটিএস পাঁচটি কৌশলগত স্তম্ভের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। এগুলি হলো: ১) সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, ২) বাণিজ্য অগ্রাধিকার ও অনুকূল উত্তরণ ব্যবস্থা সুরক্ষিত করা, ৩) রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা জোরদার করা, ৪) উৎপাদনশীল সক্ষমতা তৈরি করা এবং ৫) অংশীদারিত্ব ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
এ প্রক্রিয়ায় টেকসই পর্যায়ে উত্তররণ লাভের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার প্রদান ও ত্বরান্বিত করে একটি মসৃণ রূপান্তর নিশ্চিত করতে একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত।
এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের মাধ্যমে তৈরি হওয়া নতুন সুযোগগুলোর সর্বাধিক প্রয়োগ নিশ্চিতে এসটিএস উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, দক্ষতা বিকাশে বিনিয়োগ, উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা, টেকসই ব্যবসায়িক অনুশীলন গ্রহণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের উপর জোর দিয়েছে।
এটি বিদ্যমান শুল্ক কাঠামোর যৌক্তিককরণের জন্য, সকল রপ্তানিকারকদের জন্য সুষম ক্ষেত্র তৈরি এবং একটি বর্ধিত সময়ের জন্য বাণিজ্য অগ্রাধিকারগুলো সুরক্ষিত করার জন্য প্রধান ব্যবসায়িক অংশীদারদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
কর্মশালায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বেসরকারি খাত, থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক এবং সুশীল সমাজ সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।