অতি প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেয়া হবে: আইন উপদেষ্টা
ঢাকা, ওপেন প্রেস ডেস্ক : অতি প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
‘অন্তর্র্বতী সরকারের ১০০ দিন: আইন মন্ত্রণালয়ের কৈফিয়ত’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে আইন মন্ত্রণালয়ের বিগত ১০০ দিনের কর্মকাণ্ড আজ ১৯ নভেম্বর, ২০২৪ মঙ্গলবার তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা। এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। খবর বাসস।
সংবাদ সম্মেলনে ‘অন্তর্র্বতী সরকারের বিষয়ে সর্বত্রই একটি প্রশ্ন শোনা যায়, সেটি হলো তারা কত দিন থাকবে, তাদের মেয়াদ কত দিন হবে, নির্বাচন কবে হবে?’ এ বিষয়ে জবাব দিতে গিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন- এটি আইন মন্ত্রণালয়ের বিষয় নয়। তবে আপনাকে একটি বিষয় বলি, আমরা মোস্ট এসেনশিয়াল কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেব।
আমরা জাস্ট এই জিনিসটা চাই না যে আগের মতো কোনো ভুয়া নির্বাচন হোক। আর এটা চাই না-নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে কেউ আবার ভুয়া নির্বাচন করার সুযোগ পাক। এটা ছাড়া আর কোনো স্বার্থ নাই। এ বিষয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, অন্তর্র্বতী সরকারে যারা আছেন, তাদের অধিকাংশই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের পেশায় ফিরে যাওয়ার জন্য আগ্রহী।
অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয় ১৫ নভেম্বর। এই সময় সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী ও যুগোপযোগী করতে সংস্কারসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ১০০ দিনে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেয়া বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে, মামলা প্রত্যাহার:
গত ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত ছাত্র জনতার গণআন্দোলন দমনে দায়ের করা প্রায় সব ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলে উদ্যোগ:
পরবর্তী উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হবে। ফলে ওই আইনের অধীনে দায়েরকৃত সব স্পিস-অফেন্স মামলা প্রত্যাহার করা হবে। সাইবার নিরাপত্তা আইন নিয়ে গত ৩ অক্টোবর মতবিনিময় সভার আয়োজন করে আইন মন্ত্রণালয়। অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করে এ আইন প্রত্যাহারে যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগকে সহায়তা করা হচ্ছে। আইন উপদেষ্টা বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ বাতিলক্রমে কম্পিউটার সংক্রান্ত অপরাধগুলো প্রতিরোধের জন্য, নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪ প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ সপ্তাহে এটি জারি হবে।
নতুন নিয়োগ/নিয়োগে সহায়তা:
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে পাঁচজন বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগে ২৩জন এবং অধস্তন আদালতে ১০৯ জন বিচারক নিয়োগে সাচিবিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে আইন কর্মকর্তা নিয়োগ:
এটর্নি জেনারেল অফিসে এটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল, ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ও সহকারী এটর্নি জেনারেল মিলিয়ে মোট ২৪৯ জন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
অধস্তন আদালতে আইন কর্মকর্তা নিয়োগ:
বিজিবির বিস্ফোরক মামলার জন্য ২০ জন ও ৬১ জেলার অধস্তন আদালতসমূহে ৪ হাজার ৩০০ জন আইন কর্মকর্তা ইতোমধ্যে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে এবং অবশিষ্ট জেলা সমূহে আইন কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ আইনের খসড়া প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
দুর্নীতি প্রতিরোধ কার্যক্রম:
বিচারক, রেজিস্ট্রেশন বিভাগের কর্মকর্তা এবং আইন মন্ত্রণালয় ও এর অধীন দপ্তর সংস্থার পরিবারের সদস্যসহ অর্জিত সম্পদের হিসাব বিবরণী ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। বর্তমানে এগুলোর যাচাই-বাছাই কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
গুম বিরোধী সনদ অনুসমর্থন ও কমিশন গঠন:
গুম বিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ অনুসমর্থনে আইন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেছে। বিগত সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও গুমে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের নিমিত্ত তদন্ত কমিশন গঠনে আইন ও বিচার বিভাগ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেছে।
সংস্কার কমিশন গঠন ও সচিবিক সহায়তা:
স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাব করার লক্ষ্যে ৩ অক্টোবর বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রথম বৈঠক হয় ৬ অক্টোবর। ১২ নভেম্বর বৈঠক করেন আইন উপদেষ্টার সঙ্গে। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ওনারা যেভাবে এগোচ্ছেন, আমি খুবই আশাবাদী। সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন সংস্কার কমিশন ও বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন গঠনে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এই সংস্কার কমিশনগুলোকে সব ধরণের সাচিবিক সহায়তা প্রদান করছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
বিচার ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশন:
মডেল ই-কোর্ট স্থাপনে এবং মডেল সাব-রেজিস্ট্রি অফিস স্থাপনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এই সম্পর্কিত দু’টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।
এটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা:
স্থায়ী সরকারি এটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠায় আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। সরকারি আইন কর্মকর্তাদের আচরণবিধি যুগোপযোগীকরণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩ সংশোধনের উদ্যোগ:
গত ২৪ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩ যুগোপযোগী করতে আইনটির ৮টি ধারায় সংশোধনে খসড়া প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। বিদ্যমান এ আইনটিকে আরো যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে সুপারিশসহ গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞগণ।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এবং গত জুলাই-আগস্ট মাসে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক মানদন্ড নিশ্চিতের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত আইন যুগোপযোগী করার উদ্যোগ নেয়া হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ(ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩ বিদ্যমানে কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবার মতামত সুপারিশ নিয়ে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। কাল ২০ নভেম্বর এটি উপদেষ্টা পরিষদে উঠবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন- বৃহস্পতিবার এর মধ্যে সংশোধিত এই আইনটি প্রকাশ করা হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করা:
১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। গত ৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটরসহ প্রসিকিউশন গঠন করা হয়। মোট ১১ জন প্রসিকিউটর রয়েছেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়। ১০ জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও স্পেশাল প্রসিকিউটরাল এডভাইজার হিসাবে দেশী ও বিদেশী বিশেষজ্ঞগণকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এবং জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা(রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪ সহ মোট ১০টি অধ্যাদেশ প্রণয়ণে ভেটিং সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৯৫টি প্রজ্ঞাপন ও আদেশ (এসআরও), ৩৩টি বৈদেশিক বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সম্পাদন করেছে।
ভেটিংকৃত প্রজ্ঞাপনের মধ্যে রয়েছে ১১ টি সংস্কার কমিশন।