গার্মেন্টস কর্মী হত্যা : গোলাপ-রুপা-শাকিল রিমান্ডে
ঢাকা, ওপেন প্রেস ডেস্ক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আদাবর থানা এলাকায় গার্মেন্টস কর্মী রুবেল হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের সাত দিন ও একাত্তর টেলিভিশন থেকে চাকরিচ্যুত হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ এবং প্রিন্সিপাল করেসপন্ডেন্ট ফারজানা রুপার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ ২৬ আগস্ট, ২০২৪ সোমবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট মোশাররফ হোসেন শুনানি শেষে এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। খবর বাসস।
এর আগে রোববার রাজধানীর পশ্চিম নাখালপাড়া থেকে গোলাপকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর আদাবর থানা এলাকায় পোশাকশ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। মামলার সুষ্ঠ তদন্তের জন্য তার বিরুদ্ধে দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন পুলিশ।
আজ গার্মেন্টস কর্মী ফজলুল করিম হত্যা মামলায় রিমান্ড শেষে ফারজানা রুপা ও শাকিলকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর গার্মেন্টস কর্মী রুবেল হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন পূর্বক তাদের দশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়।
গত বুধবার (২১ আগস্ট) শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তারা বিদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বিমানবন্দরে গেলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের আটক করে ডিবিতে হস্থান্তর করে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) আদালতে হাজির করে উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় গার্মেন্ট কর্মী ফজলুল করিম হত্যা মামলায় তাদের দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আহম্মদ হুমায়ুন কবির তাদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে গত ৮ আগস্ট আদাবর থানা এলাকায় পোশাকশ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। এ মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, সাকিব আল হাসান ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদসহ ১৫৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ৪শ’-৫শ’ জনকে আসামি করা হয়। গত ২২ আগস্ট পোশাকশ্রমিক রুবেলের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে আদাবর থানায় মামলাটি করেন।
বাদী এজাহারে অভিযোগ করেন যে, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের মদদে সরকারী চাকরীতে অন্যায় ও বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা বহালের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ ও তাদের মদদপুষ্ট অনুগতদের চাকরিতে নিয়োগের সুযোগ প্রদানের চক্রান্ত ও অপচেষ্টা করলে দেশের সমগ্র ছাত্র সমাজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের এই বৈষম্যমূলক অন্যায় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করে। ছাত্র জনতার শান্তিপূর্ণ গন আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত ও বিতর্কিত করার হীন উদ্দেশ্যে এক নম্বর আসামী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ গত ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাজাকারের নাতি-পুতি বলে অভিহিত করে।
শেখ হাসিনা এরূপ উদ্দেশ্যমূলক ঘৃণ্য মিথ্যা, কুৎসা ও উৎকানিমূলক এবং অপমানজনক বক্তব্য দিয়ে পরিকল্পিতভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুভূতিতে আঘাত করে চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে উস্কে দিয়ে সারাদেশে সহিংস আন্দোলনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। শেখ হাসিনার নির্দেশে আসামিরা শান্তিপূর্ন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও জনতার উপর আঘাত, অঙ্গহানী, নারীর শ¬ীলতাহানিসহ নারকীয় গণহত্যা ও হত্যাকান্ড সংঘটনে পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করে। এ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবং আসামিরা আন্দোলনকারী কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালায়।
আসামিদের নির্দেশায় গত ১৭ জুলাই ঢাকা জেলা ও মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ছাত্রজনতার উপর হামলা ও গুলি চালায়। মামলার ২৬ নং আসামি অন্যান্য আসামিদের অপরাধ কার্য নির্বিঘেœ সংঘটিত করার লক্ষ্যে এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট করার নিমিত্তে সারাদেশে একযোগে ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ রাখেন। আসামিদের নির্দেশনায় বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্ট মিছিলে উপস্থিত নিরস্ত্র ছাত্র জনতার মৃত্যু নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গুলি ছুড়লে বাদীর ছেলে রুবেল গুলিবিদ্ধ হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।