অগ্নিসংযোগকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রীর
ঢাকা, ওপেন প্রেস ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে আরও ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যারা মানুষের ক্ষতি করবে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রাখবে এবং কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, “জ্বালাও-পোড়াও ও অগ্নিসংযোগ যেন কেউ না করতে পারে। এটা যারা করবে তাদের কোন ছাড় নেই। যতই মুরুব্বি ধরুক আর যাই করুক এদের আমরা ছাড়বোনা, এটা পরিষ্কার কথা। মানুষের ক্ষতি যারা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ২৩ মে, ২০২৪, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে একথা বলেন। খবর বাসস।
তিনি বলেন, গ্রেনেড হামলাকারি, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, দুর্নীতিবাজরা তাঁর করে দেওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে বিদেশে বসে রোজই আন্দোলন, সরকার উৎখাতসহ নানারকম হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে।
“যতক্ষণ জনগণ আমাদের সাথে, আমি পরোয়া করিনা,” বলেন তিনি।
তিনি বৈঠকে অংশগ্রহণকারি ১৪ দলীয় জোট নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এটা আমাদের সবসময় লক্ষ্য রাখতে ও বুঝতে হবে যে, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ছাড়া দেশের মানুষের কোন কল্যাণ হবে না।
তিনি বলেন, এখানে আমাদের একটা জিনিষ চিন্তা করতে হবে আমরা যারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি তারা সুসংগঠিত হয়ে জনগনের কাছে গিয়ে তাদের এই চেতনায় যুক্ত করতে আনতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিহাস বিকৃতির চক্রান্ত মোকাবিলা করে তাঁর সরকার জয় বাংলা শ্লোগান
আবার ফিরিয়ে এনেছে, জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সম্প্রচার নিষিদ্ধ ছিল তা এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিলে স্থান করে নিয়েছে, অমর একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবেসের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে সেটাকে আর কেউ পিছিয়ে দিতে যেন না পারে। আর পারবেও না কারণ জনগণই আমাদের শক্তি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি উল্লেখ করেন, বিএনপি বাংলাদেশে নির্বাচন করতে না দেওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল।
সে সময়কার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের প্রসংগ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশে একটি বিমান ঘাঁটি করতে দেওয়ার প্রস্তাবও তাঁর কাছে এসেছিল, তাহলে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং তাঁর পুন:নির্বাচিত হওয়ার ব্যবস্থা তারাই করবে। কিন্তু তখনও তিনি সেই নেতিবাচক উত্তরই দেন। যে ধরণের উত্তর ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে ভারতে বাংলাদেশের গ্যাস বিক্রির বিষয়ে আমেরিকার প্রস্তাবে তিনি দিয়েছিলেন।
‘কোন এক সাদা চামড়ার’ প্রস্তাবের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। দেশের অংশ ভাড়া দিয়ে বা কারো হাতে তুলে দিয়ে আমি ক্ষমতায় যেতে চাইনা। ক্ষমতার দরকার নেই। যদি জনগণ চায় ক্ষমতায় আসবো, না হয় আসবো না। আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে।
তিনি বলেন, এই কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য সবার জানা উচিত যে তাঁর যে যুদ্ধ সেটা ঘরে বাইরে সব জায়গায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চক্রান্ত এখনো আছে। বে অব বেঙ্গলে একটা ঘাঁটি করবে। তার কারণ হচ্ছে বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগরে প্রাচীন কাল থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে। আর এই জায়গাটা নিয়ে কোন রকম কারো দ্বন্দ্ব নাই। কাজেই এই জায়গাটির ওপরে সকলেরই নজর। সেটা আমি হতে দিচ্ছি না সেটাও আমার একটা অপরাধ।
তিনি বলেন, যে কারণে আমাদের কিছু সমস্যায় সবসময় পড়তে হচ্ছে, পড়তে হবে আমি জানি। কিন্তু আমি এটাকে পাত্তা দেইনা, সোজাকথা। দেশের মানুষ আমার শক্তি এই মানুষ যদি ঠিক থাকে, আমরা আছি। দেশটার যে উন্নতি হচ্ছে এটাও অনেকের পছন্দ নয়। এমনকি আমরা যে খাদ্য উৎপাদন করি বড় এক দেশ বলে ফেলল এত খাদ্য উৎপাদনের দরকার কি, আমাদেরতো আছে আমরা দিতে পারি। জাতির পিতা যে বলেছিলেন তাঁর মাটি ও মানুষ আছে তা দিয়ে স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলবেন এবং সে পদক্ষেপও নিয়েছিলেন সেই পদাংক অনুসরণ করে আমরা নিজেদের খাদ্য নিজেরাই উৎপাদন করবো এবং এই দেশে কোন মানুষ আর ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। সেভাবেই আমর দেশটাকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি যেখানে বাধা দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা রয়েছে, যোগ করেন তিনি।
তাঁর সরকারের করে দেওয়া অবাধ তথ্য প্রবাহের সুযোগ নিয়ে তাঁর বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করায় দেশে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, রেডিও সহ বিভিন্ন গণমাধ্যম এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের ঢালাও এবং মিথ্যা সমালোচনার পরও কোন কোন চ্যানেলের টক শো’তে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে না দেওয়ার অভিযোগেরও তিনি সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আরো যে সমস্যাটা হবে সেটি হচ্ছে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে মানুষকে হেয় প্রতিপন্ন করা। সেটাও করা হচ্ছে এবং সেটিকে নজরদারিতে আনার জন্যই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। শুধু আমাদের দেশ নয় উন্নত দেশগুলোও এখন এই ব্যাপারে চিন্তিত এবং এ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়ও খুঁজছে দেশগুলো।
এ সময় তিনি কোভিড-১৯ পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশনের প্রসংগ টেনে বলেন, মূল্যস্ফীতি সমস্যাটা বড় আকারে দেখা দিয়েছে এবং কেবল বাংলাদেশ নয় পৃথবীর অনেক উন্নত দেশও এর ভ’ক্তভোগী।
তিনি সংবাদে প্রচারিত সাম্প্রতিক একটি অর্থনৈতিক রিপোর্টের বরাত দিয়ে বলেন, অমরিকাতেও মূল্যস্ফীতি একটি বিরাট সমস্যা। অনেক দেশের রিজার্ভ কমে যাচ্ছে, আমাদেরও। কোভিড-১৯ এর সময় ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানী-রপ্তানী বন্ধ এবং মানুষের চলাচল সীমিত থাকায় এবং বৈধ চ্যানেলে প্রবাসি রেমিট্যান্স আসায় দেশের রিজার্ভ বেড়েছিল। কিন্তু সবকিছু চালুর পর আবার ব্যয় বেড়েছে।
তিনি বলেন, খরচ হবেই কিন্তু আমাদের যদি আপদকালীন সময়ের জন্য খাদ্য মজুতটা থাকে তাহলে রিজার্ভ নিয়ে খুব একটা চিন্তার কোন ব্যাপার নেই। যথেষ্ট উৎপাদন হচ্ছে, উৎপাদনে কোন অভাব নেই। বোরো ধানও ভাল হয়েছে, হাওড়ে ধান কাটা প্রায় শেষ। সেভাবেই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি দেশটা যেন সচল থাকে এবং এগিয়ে যেতে পারে।
দেশে বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে নানারকম খেলা চলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আলুর কোল্ড ষ্টোরেজে ডিম নিয়ে রাখা হচ্ছে। এরকম নানা ঘটনা বাংলাদেশে ঘটছে।
এ সময় তিনি দেশের প্রতি ইঞ্চি অনাবাদী জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোয় দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহবান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এভাবে করতে পারলে আমাদের দেশে খাবারের কোন অভাব হবেনা, আমরা বাইরেও পাঠাতে পারবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্জনগুলো ধরে রেখে আমাদের আরো সামনের দিকে এগোতে হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশটাকে গড়ে তুলত হবে।
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন এবং গণহত্যার প্রসংগ টেনে তিনি বলেন, তিনি যে ফোরামেই যাচ্ছেন এর প্রতিবাদ করছেন এবং যুদ্ধ বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছেন।
“আমাদের স্টান্ডার্ডটা ঠিক থাকবে সবসময়। আমরা চাইনা যে এ ধরনের ঘটনা ঘটুক। আমরা সবসময় সাধারণ ও নির্যাতিত মানুষের পাশে আছি। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি সকলের সঙ্গে বন্ধত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এটা ধরে রেখেছি যার কোন ব্যত্যয় ঘটছে না।” বলেন তিনি।
এ সময় সম্প্রতি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুতে বাংলাদেশে শোক দিবস পালনের এবং মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারি ১০ লাখেরও অধিক রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রচেষ্টার উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি তথা সবকিছু মিলিয়ে একটা চাপ আছে অর্থনীতির ওপর। যা মেকাবিলায় তাঁর সরকারের নানা পদক্ষেপেরও উল্লেখ করেন তিনি।