কবি সুফিয়া কামালের প্রয়াণ দিবসের আলোচনা সভা
নিউজ ডেস্ক :‘কবি সুফিয়া কামালের আদর্শ ও মানবমুক্তির চেতনাকে ধারণ করেই নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনে দৃঢ় প্রত্যয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। মানব কল্যাণে তাঁর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমাদের সকলকে উজ্জীবিত হতে হবে।’
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কবি সুফিয়া কামালের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে আজ ২১ নভেম্বর ২০২৩ মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন ।
গতকাল ২০ নভেম্বর ছিলো তাঁর ২৪তম প্রয়াণ দিবস। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কবির প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন ও আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, “কবি সুফিয়া কামাল ছিলেন সবসময় সমসাময়িক। তিনি বলতেন, আমি খুব ভয় পাই একবিংশ শতাব্দী কেমন হবে, এই শতাব্দীর মানুষের মনুষ্যত্ব কেমন হবে?’’ তাঁর সেই শংকা আজ সত্যে পরিণত হয়েছে।
তিনি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অবক্ষয় থেকে নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করতে- ‘মানবতাকে রক্ষা কর, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা কর’ এই শ্লোগান নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
বিশিষ্ট আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বলেন, কবি সুফিয়া কামাল সকলের আশ্রয় ছিলেন। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি চারিত্রিক দৃঢ়তা বজায় রাখতেন। তিনি ঐতিহ্য ধারণ করে চলেছেন; সময়ের সাথে বুদ্ধির সঙ্গে মেধাকেও ধারণ করেছেন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে তিনি মানবতার চর্চাকে সবসময় গুরুত্ব দিয়েছেন। বর্তমান সময়ে কবি সুফিয়া কামালের মতো আদর্শ বড় বেশি প্রয়োজন।
মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, মানবজীবনের ক্ষণআয়ুর জীবনকালে তিনি মানবকল্যাণে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। এই মহীয়সী নারী মানবমুক্তির অন্বেষায় তাঁর কাজের মাধ্যমে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি কয়েক প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে গেছেন। সমাজের মধ্যে তৈরি হওয়া অবক্ষয়, পরিবেশগত বিপর্যয়, সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ প্রতিরোধে তিনি ছিলেন সবসময় সোচ্চার। তাঁর সেই আদর্শকে ধারণ করেই বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারী মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদা রেহানা বেগম বলেন, কবি সুফিয়া কামাল ছিলেন মুক্তবুদ্ধি ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনা ও ভাবনার প্রতিচ্ছবি। নারী শিক্ষা ও নারী স্বাধীনতার জন্য তিনি ছিলেন সবসময় সোচ্চার ।
কবি সুফিয়া কামাল নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের আদর্শ অনুসরণ করে গেছেন। তাঁর নেতৃত্বে মহিলা পরিষদ অত্যাবশ্যকীয় নারীবান্ধব আইন প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ‘যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০’, ‘বিবাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রেশন আইন’ এবং ‘অভিন্ন পারিবারিক আইনের প্রস্তাবনা’ তৈরি।
ডা: ফওজিয়া মোসলেম-এর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, মহিলা পরিষদের গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সংগঠন সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম।
এর আগে কবি সুফিয়া কামালের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। এসময় সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী শারমিন সাথী ময়না। কবিতা আবৃত্তি করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আইটি অফিসার দোলন কৃষ্ণ শীল। আলোচনা শেষে “লীলাবতী নাগঃ দ্যা রিবেল’’ শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, সম্পাদকমণ্ডলী, কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বাসস