জাতীয়

শিশুশ্রম নিরসনে পরিবার, শিক্ষক ও রাষ্ট্রের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান

ঢাকা, ওপেন প্রেস২৪ ডেস্ক : সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, আজকের শিশু তথা নতুন প্রজন্ম দেশ ও জাতির আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এসব শিশুদের শ্রম নিরসনে পরিবার, শিক্ষক ও রাষ্ট্রের পাশাপাশি সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান  জানান তিনি।

আজ ২১ জুন, ২০২৫ শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএডিসি) শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস- ২০২৫ উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশুশ্রম  প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি । খবর বাসস।

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে সংগঠনের চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ আহ্বান জানান।

উপদেষ্টা বলেন, ১৯২৪ সালে জেনেভায় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শিশু অধিকার ঘোষণা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৯ সালে জাতিসংঘে শিশু অধিকার সনদ ঘোষণা করা হয়; যা চারটি ভাগে বিভক্ত। বর্তমানে বাংলাদেশের আইনে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে দিন দিন শিশুশ্রমিক বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সরকার শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। শিশু অধিকার পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তনে সরকার উন্নয়ন সংস্থা, মানবাধিকার কর্মীসহ নাগরিক সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা বিদ্যমান থাকার পরেও শিশুদের সার্বিক অধিকার নিশ্চিতকরণে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

উপদেষ্টা বলেন, ইতোমধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পথ শিশুদের পরিসংখ্যানের কাজ শুরু হয়েছে। তাদের ডাটাবেজ তৈরি করে যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মমুখী জায়গায় আনতে চাই। সরকারের পাশাপাশি  সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে শিশুশ্রম বন্ধ করতে। সমাজের সব বিত্তবান মানুষের প্রতি আহ্বান, আসুন আমরা সবাই এসব শিশুদের দিকে বাড়িয়ে দিই আমাদের সাহায্যের হাত। সরকারের পাশাপাশি আমরা এদের শিক্ষা, সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এগিয়ে আসি। তাহলেই তাদের মুখে ফুটবে হাসি।

তিনি আরো বলেন, দেশের যে প্রান্তে তাকাই সেখানেই দেখতে পাই হাজার হাজার শিশু শ্রম দিচ্ছে গার্মেন্টস, কলকারখানা, হোটেল, গ্যারেজ আবার অনেকেই বাস, টেম্পো এসবের হেলপারি করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২০ লাখ গৃহ শ্রমিকের মধ্যে ৯৩ শতাংশ  শিশু গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এসব গৃহ শ্রমিকরা প্রতিনিয়তই শিকার হচ্ছে মানসিক অত্যাচার, শারীরিক নির্যাতন ও আর্থিক শোষণের। বাংলাদেশের প্রায় ৩’শ ধরনের কাজ শিশুরা করে থাকে। এসব কাজের মধ্যে ৪৫টি কাজ হচ্ছে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। শিশু শ্রমিকের বৃহৎ একটি সংখ্যা হচ্ছে পথশিশুরা এবং তারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত।

উপদেষ্টা জানান, এক তথ্য মতে, শহরে প্রায় ১৮ লাখ শিশু কাজ করে থাকে এবং গ্রামে কাজ করে থাকে প্রায় ৬৭ লাখ শিশু। এসব শিশুর মধ্যে প্রায় ৪৭ লাখ শিশু নিজেদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে নিয়োজিত রেখেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও আইএলওর জরিপ মতে, কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ রয়েছে ৪৫ ধরনের, তার মধ্যে শিশুরা ৪১টি কাজে অংশগ্রহণ করে থাকে। যারা গৃহপরিচারিকার কাজ করে তাদের বয়স ১৬ বছরের নিচে। ইউনিসেফের তথ্যমতে, গৃহপরিচারিকার ৮৬ শতাংশই মেয়ে। ৩০ শতাংশের বয়স ছয় থেকে ১১ বছর, আর বাকিদের বয়স ১২ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত। এরা প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করলেও  নির্ধারিত শ্রমের পারিশ্রমিক পায় না। কাজের চাপ ও নানা কারণে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসব শিশুদের সামান্যতম ভুল হলেই হতে হয় নির্যাতনের শিকার। নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও হাত তোলে এসব অসহায় কোমলমতি শিশুদের শরীরে। অনেক শিশু নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। প্রায়ই গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, মহিলা ও শিশু শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন, বাংলাদেশস্থ আইএলও অফিসের শ্রম প্রশাসন বিভাগের প্রধান নীরান রামজুঠান বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস- ২০২৫ উপলক্ষে ‘শিশুশ্রমের প্রধান দায় রাষ্ট্রের নয়,সমাজের’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকগণ অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতা শেষে উপদেষ্টা চ্যাম্পিয়ন দলকে ৫০ হাজার টাকার চেক ও রানারআপ দলকে ৩০ হাজার টাকার চেকসহ ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করেন।

উপদেষ্টা এ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শিশুশ্রম প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক যুক্তিতর্ক তুলে ধরার জন্য দুটি দলের অংশগ্রহণকারী বিতার্কিকগণকে ধন্যবাদ জানান।

Share

Follow us