শহিদ জসিমের পরিবার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চায়
ভোলা, ওপেন প্রেস ডেস্ক : জেলা সদরের পৌর এলাকার ৩ নং ওয়ার্ডের পৌর নবীপুরের বাসিন্দা শহিদ মো. জসিমের পরিবার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চান। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৪ আগস্ট শহরের নতুন বাজার এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন জসিম। পেশায় ছাতার কারিগর জসিম পৌর নবীপুর এলাকার মৃত আবুল কালামের ছেলে। জসিমের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী নার্গিস এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। পরিবারের প্রধান উপার্জনকারীকে হারিয়ে হতাশার কালো মেঘ গ্রাস করেছে স্বজনদের। সামনের দিনগুলোতে কিভাবে চলবে কিছুই জানেন না নার্গিস।
সরেজমিনে জসিমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মৃত্যুর একমাস পরেও শোকে কাতর স্বজনরা। স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে জসিমের বৃদ্ধা অসুস্থ মা বিবি ফাতেমা (৮০) বসবাস করেন। মায়ের চিকিৎসার খরচ শহিদ জসিমই বহন করতেন। জসিমের ছেলে সিয়াম ও মেয়ে মিম স্থানীয় আলিয়া মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এছাড়া ছোট মেয়ে মুনতাহা একই মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। কিন্তু জসিমের মৃত্যুর পরে ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার। অসুস্থ মা এখনো জানে না তার ছেলে জসিম আর বেঁচে নেই।
শহিদ জসিমের ঘরের পাশে তার ছোট ভাই সবুজের ঘর। সবুজ জসিমের ছাতার দোকানের উল্টো পাশে সড়কে আখ বিক্রি করে থাকেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে জসিম সবার বড়। তাদের বাবার মৃত্যুর পর জসিমই পরিবারের হাল ধরেন।
জসিমের ছোট ভাই মো. সবুজ বলেন, বাবার মৃত্যুর পরে ছোটবেলা থেকে এই ভাইয়ের কাছে থেকেই তিনি বড় হয়েছেন। ৪ আগস্ট সকাল থেকেই ছাত্র-জনতার সাথে পুলিশ-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ হয়। সেদিন তার ভাই দোকানে বসেই ছাতা মেরামত করছিল। তিনি ভাইয়ের দোকানে ছিলেন। দুপুর দেড়টার দিকে যখন পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে, তখন তিনি তার ভাইকে দোকান বন্ধ করে তার সাথে চলে যেতে বলেন। তখন তার ভাই বলে, তুই যা, আমি দোকান বন্ধ করে আসতেছি। এটাই ছিল তার ভাইয়ের সাথে শেষ কথা।
তিনি বলেন, তিনি বাসায় চলে আসার পরে, দুইটার দিকে ফোন আসে তার ভাই জসিম পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। পরে জানতে পারেন, দোকান বন্ধ করে ফেরার পথে দোকানের একটু সামনেই পুলিশের ছোড়া একটি গুলি তার ভাইয়ের মাথায় লাগে । এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরি এবং জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন করি।
জসিমের স্ত্রী নার্গিস বলেন, তার স্বামী গত ৪ আগস্ট বেলা ১২ টার দিকে ফোন করে বলেছিল দুপুরে খাবার না পাঠাতে। শহরে অনেক গোলাগুলি হচ্ছে দুপুরে বাসায় চলে আসবেন, একসাথে খাবার খাবেন। তার স্বামী ফিরলেন ঠিকই, কিন্তু লাশ হয়ে। কোনদিন ভাবতে পারেননি তার স্বামী এমন অকালে চলে যাবেন তাদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে।
নার্গিস আরো বলেন, তার স্বামীর জীবনের বিনিময়ে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। নতুন সরকার গঠন হয়েছে। বর্তমান সরকারের কাছে তার দাবি, শহিদ জসিম যেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি লাভ করে এবং বর্তমানে তার পরিবারের কথা বিবেচনা করে তাকে যেন একটি ছোটখাটো চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। যাতে ছেলে-মেয়ে নিয়ে সম্মানের সাথে বেঁচে থাকতে পারেন।
শহীদ জসিমের একমাত্র ছেলে সিয়াম (১৫) জানান, তার বাবা কখনো চাইতেন না ছেলে তার মত ছাতার কাজ করুক। তাই শত আর্থিক কষ্টের মধ্যেও তাকে ও তার বোনদের লেখাপড়া চালিয়ে নিয়েছেন। বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে লেখাপড়া শেষ করে একদিন ভালো চাকরি করবে। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর এখন লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
জসিমের বড় মেয়ে মিম (১৪) বলেন, তার বাবার মৃত্যুতে পরিবারের তারা এতিম হয়ে গেলেন। যারা আমাদেরকে এতিম করেছে আমরা তাদের বিচার চাই।
এদিকে জসিমের মৃত্যুর পর তার পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি ও এনজিও গ্রামীণ জন উন্নয়ন সংস্থা। এনজিওর পক্ষ থেকে শহীদ জসিমের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এক লক্ষ টাকা, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার ও বিএনপি’র পক্ষ থেকে ৩০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।