অপরাধআইন-আদালত

কাহালু সমবায় অফিসারের মিথ্যা বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ 

জেলা প্রতিনিধি : কাহালু উপজেলা সমবায় অফিসার মো. মাহবুবর রহমানের মিথ্যাচারের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে দেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
গতকাল ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাইকড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিটু চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে উপজেলা প্রশাসন একটি তদ্বন্ত কমিটি প্রেরণ করেন পাইকড় ইউনিয়ন পরিষদে। তদ্বন্ত কমিটির সদস্য ও কাহালু উপজেলা সমবায় অফিসার মো. মাহবুবর রহমান ইউনিয়ন পরিষদে তদ্বন্ত চলাকালীন চলচ্চিত্র পরিচালক ও গণমাধ্যম কমী মনজুরুল ইসলাম মেঘ এর আবেদনপত্র পড়ার সময়, সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ভাবে হেয় করার উদ্দেশ্যে বলেন তিনি (মনজুরুল) “ভাষা বুঝেন না, যা লেখেছেন তার অর্ধেক বানান ভুল”।
মাহবুবর রহমানের এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন পাইকড় ইউনিয়নবাসী, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নেতৃবৃন্দ, সাহানা ফিরোজ ফাউন্ডেশন, বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন “বিপিআই বন্ধন”, ইঞ্জিনিয়ারং ইন্সটিটিউট অফ বাংলাদেশ এর নেতৃত্ববৃন্দ, আইডিইবি নেতৃত্ববৃন্দ।
আরো, তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল এলাইন্স এর আন্তর্জাতিক নেতৃত্ববৃন্দ।
তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন সিনেমা কিং ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, মোরালুক লিমিটেড, সিনেমা কিং লিমিটেড প্রতিষ্ঠান সমূহের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। ওয়ার্ল্ড নিউজ অফ বাংলাদেশ, দ্য পার্লামেন্ট ফেইস পত্রিকার সকল সাংবাদিকবৃন্দ।
মনজুরুল ইসলাম মেঘ কে শুধু হেয় করেই তিনি বক্তব্য হেয়নি, ইতোমধ্যে মিথ্যাচার করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তদ্বন্ত সভায় মাহবুবর রহমান দাবি করেন যে, তিনি নিজে চলচ্চিত্র পরিচালক ও গণমাধ্যম কর্মী মনজুরুল ইসলাম মেঘের সাথে ৪/৫ বার মোবাইলে কথা বলেছেন, এবং তদন্তে উপস্থিত থাকতে বলেছেন। তিনি না থাকতে পারলেও তার প্রতিনিধিকে উপস্থিত থাকতে বলেছেন। তিনি কেনো উপস্থিত নেই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেন। 
উল্লেখ্য, তদ্বন্ত সভা শুরু হওয়ার কথা ছিলো সকাল ১০:৩০ ঘটিকায়, অথচ তদন্তর কমিটির সদস্যরা পাইকড় ইউনিয়ন পরিষদে এসেছেন প্রায় ২:৩০ ঘন্টা দেরি করে দুপুর ১ টার পরে। 
মনজুরুল ইসলাম মেঘ দাবি করেছেন মো. মাহবুবর রহমান গত ২০ আগস্ট দুপুর ১:৫৮ মিনিটে আমার মোবাইলে কল করে উপজেলা সমাজ সেবা অফিস অথবা বগুড়া শহরে চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলেন, সেটিই আমার সাথে প্রথম কথা, তার সম্পর্কে আমার কোন ধারনা নেই। তিনি নিজেকে তদ্বন্ত কমিটির সদস্য ও সমবায় অফিসার পরিচয় দিয়ে আমার সাথে কথা বলেছিলেন। আমি তাকে জানিয়ে ছিলাম ফেনীর বন্যার্তদের পাশে থাকার জন্য আমি ব্যস্থ আছি, বগুড়ায় আসলে কখনো আপনার সাথে সাক্ষাত করার চেষ্টা করবো।
মনজুরুল আরো বলেন, ২১ আগস্ট ২০২৪ তারিখে জাতীয় দৈনিক সবুজ বাংলাদশ, দৈনিক নববার্তা পত্রিকায় “দূর্নীতিবাজ মিটু চেয়ারম্যানকে রক্ষার চেষ্টা করছে উপজেলা প্রশাসন” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে ২২ আগস্ট দুপুর ১২:১৩ মিনিট হতে ৭ মিনিট ২৩ সেকেন্ড কথা হয়েছে মো. মাহবুবর রহমানের সাথে। আমি কল করে সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন, নিউজের বিষয়টি তুলে ধরে বলেছিলাম প্রশাসন তো মিটু চেয়ারম্যানের দুর্নীতি গোপন করার চেষ্টা করছেন সংবাদে উঠে এসেছে, তদ্বন্ত কি সঠিক হবে, তিনি বলেছেন অপেক্ষ করেন। এটিই তার সাথে আমার শেষ কথা। এর পরে তার (মাহবুবর রহমান) স্বাক্ষরিত তদ্বন্ত সভার একটি চিটি ইস্যু হয়েছে, যেটিতে আমাকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে, অথচ আমাকে (সরাসরি, ডাকযোগ, ইমেইল, মোবাইল কল বা এসএমএস) কোন মাধ্যেম থেকেই চিঠি দেওয়া হয়নি। তদ্বন্ত কমিটি আমাকে চিঠি না দিয়ে আইনগত ভাবে সঠিক কাজ করেননি।
মনজুরুল ইসলাম মেঘ বলেন, তদন্তের বিষয়ে আমি অবগত হয়েছি এলাকার জনগনের কাছে থেকে। আমি ইচ্ছা করলে সেখানে অংশগ্রন না করে কেনো আমাকে চিঠি দেওয়া হয়নি কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠাতে পারতাম, সেটি না করে সঠিক নিরপেক্ষ তদ্বন্তের স্বার্থে ভিডিও কলে অংশ গ্রহণ করার জন্য মো. নাহিদ হাসান কে আমার প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে পাঠায়। তদ্বন্ত কর্মকর্তারা প্রায় ২ ঘন্টা বিলম্ব করে ১২:৩০ পর্যন্ত সেখানে উপস্থিত না হলে, আমার প্রতিনিধি ফিরিয়ে আসে।
মনজুরুল প্রতিবেদকে জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে কাহালু উপজেলা সমবায় অফিসার মো. মাহবুবর রহমান যে বক্তব্য দিয়েছে সেটি খতিয়ে দেখে মানহানির মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তার আইনজীবিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ৩ সেপ্টেম্বর তদ্বন্ত কমিটির সদস্যরা নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় ২:৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত করে দুপুর ১ টার পরে তদ্বন্ত করতে আসেন, বিষয়টিকে সরকারী চাকুরীজীবির দায়িত্ব পালনে সচেতনার অভাব বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
তদ্বন্তে মিটু চৌধুরীর বিরুদ্ধে অসংখ্য দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। কয়েকশত লোক বিচারের দাবিতে ইউনিয়ন পরিষদে সকাল থেকে অবস্থান নেয়। বিষয়টি টের পেয়ে তদ্বন্তে অনুপস্থিত ছিলেন আত্নগোপনে থাকা অভিযুক্ত কাহালু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাইকড় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মিটু চৌধুরী।
তদ্বন্ত সভায় মনজুরুল ইসলাম মেঘের প্রতিনিধি হিসেবে জনস্বার্থে কথা বলেন এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মো. ঈসরাইল হোসাইন প্রামাণিক, তিনি সবগুলি অভিযোগের প্রমাণ উপস্থাপন করেন। মিটুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো, তিনি বাসাবাড়ির হোল্ডিং নাম্বারে বেআইনী ভাবে নিজের ছবি ব্যবহার করেছেন, সেই তদ্বন্ত করতেই ভয়াবহ দূর্নীতির তথ্য বের হয়ে আসে। উপস্থিত স্বাক্ষী ওমর আলী জানান, এই নাম্বার প্লেট দিয়ে অন্যায় ভাবে ১৫০ টাকা করে নিয়েছেন মিটু চৌধুরী, এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপস্থিত ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা।
মিটুর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো তিনি ইউনিয়ন পরিষদের দেওয়ালে বড় করে নিজের নাম প্রচার করেছেন সেটি প্রমানিত হয় প্রমাণিত হয় তদ্বন্তে। এই অভিযোগের বিষয়টির শুনাণীর সময় সমবায় অফিসার মাহবুবর রহমান অপ্রাসঙ্গীক ভাবে বলেন ডিসি, ইউএনও এখানে এসেছেন তারাও দেখেছেন, এটি অন্যায় হলে তারা কি নিষেধ করতেন না? মাহবুবর রহমান ডিসি, ইউএনও দের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি কার কাছে প্রশ্ন করলেন তদ্বন্ত সভায় এবং ডিসি, ইউএনও কোন বিষয়ে নজর না দিলে সেটি কেনো বেআইনী হবেনা সেই বিষয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকার জনস্বার্থে মিটু চৌধুরীর দুর্নীতিন প্রমাণসহ বক্তব্য তুলে ধরেন কাহালু উপজেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন কাজল, তিনি বলেন, মিটু চৌধুরী আড়োলা বাজারে ‍দুই লাখ টাকার একটি প্রজেক্ট কাজ না করে দুর্নীতি করেছেন। এর জবাবে মাহবুবর রহমান জানান চেয়ারম্যান জায়গা না পেয়ে টাকা উত্তোলন করেনি, উপস্থিত জনগন প্রতিবাদ করেন। ইউনিয়নের সর্বত্র এই বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে, তদ্বন্ত কর্মকর্তারা কি তদ্বন্ত করতে এসেছিলেন নাকি মিটু চৌধুরীর দুর্নীতি গোপন করতে এসেছিলেন। উল্লেখ্য, আড়োলা বাজার অত্র ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় বাজার, সেখানেই এই দুর্নীতি হয়েছে।
৪ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি রইচ উদ্দিন তুলে ধরেন ইউনিয়নের প্রত্যেক গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে মিটু চৌধুরী নিজের ছবিসহ বাড়ির হোল্ডিং নাম্বার দিয়ে ১৫০ টাকা করে নিয়ে বিপুল পরিমানের অর্থ অবৈধ ভাবে হাতিয়ে নিয়েছে। প্রথমত ছবি ব্যবহার করাই আইনত অন্যায়, আবার দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অপরাধও করেছেন।
তদ্বন্ত সভায় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হারুন জানান, মিটু চৌধুরী বিএনপি জামায়াতের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা-হামলা করে নির্যাতন করেছে, আমি গরিব মানুষ আমার শুধু একটি বাইসাইকেল আছে, যার মূল্য মাত্র ৫ হাজার টাকা। অথচ মিটু চৌধুরী বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মোটার সাইকেল (বাইক) পোড়ানোর মিথ্যা মামলা দিয়েছে, সেই মামলায় উল্লেখ করেছে মোটার সাইকেল টি আমার (হারুনের)। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা, আমার কোন মোটর সাইকেল নেই।
তদ্বন্ত সভায় সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের নিতান্ত সাধারন রাজনীতিমুক্ত রতন জানান, মিটু চৌধুরী কোন কারণ ছাড়ায় আামকে হত্যার উদ্ধেশ্যে হামলা করে, আমার শরীরে আঘাত করেছে, ৬ টি সিলাই দিতে হয়েছে। আদালতে ঘুরেছি, থানায় ঘুরেছি মামলা নেয়নি কেউ। আমাকে আঘাত করা হলো, আবার মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হাজত খাটানো হলো। আমার বাড়ি থেকে মালামাল লুট করেছে মিটু চৌধুরীর সন্ত্রাসী বাহিনী। আমাদের প্রায়ই হুমকি দিতো, সবকিছু তাকে লেখেদিতে হবে না হলে মেরে ফেলবে। তিনি আমাদেরকে বাংলাদেশে থেকে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করতেন এই তথ্যটি প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পাইকড় ইউনিয়ন থেকে তথ্য পাওয়া গেছে, অভিযুক্ত মিটু চৌধুরীকে অতিদ্রুত বরখাস্ত করা না হলে ইউনিয়নবাসি উপজেলা প্রশাসনে গণজমায়েত করবে। একই সাথে কাহালু উপজেলা সমবায় অফিসার মো. মাহবুবর রহমানকে অতিদ্রুত বদলি করার দাবিও জানিয়েছে কাহালুবাসী। 
খোজ নিয়ে জানা গেছে কাহালু উপজেলা সমবায় অফিসার বগুড়া সদর উপজেলায় দীর্ঘদিন যাবত কর্মরত থাকাকালীন অনিয়মের অভিযোগে রাজশাহী বিভাগ থেকে বদলি করে রংপুর বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছিলো, সেখান থেকে তদবির করে বিগত একবছর আগে কাহালু উপজেলায় এসেছেন। তার বাড়ি বগুড়া সদরের লাহীড়িপাড়া গ্রামে।
Share

Follow us