আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িঘরে ফিরছে মানুষ : ত্রাণ মন্ত্রণালয়
ঢাকা, ওপেন প্রেস ডেস্ক : সার্বিকভাবে দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরছে। বন্যা দুর্গত জেলাগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে বলেও জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
দেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ১১ জেলায় আকস্মিক বন্যায় সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত ৫৯ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।
আজ ৩১ আগস্ট, ২০২৪ শনিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ‘চলমান বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি’ নিয়ে প্রকাশিত তথ্য বিবরণীতে এ তথ্য জানা গেছে। খবর বাসস।
ইতোমধ্যে কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সূম্পর্ণ স্বাভাবিক ও কয়েক জেলায় উন্নতি হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ সিলেট, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার জেলার বন্যা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষীপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। এখনও বন্যা কবলিত ১১ জেলার ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৯৯৫টি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, এখনও দেশের ৬৮টি উপজেলা বন্যা প্লাবিত রয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন বা পৌরসভা রয়েছে ৫০৪টি। বর্তমানে পানিবন্দি ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৯৯৫টি পরিবার পানিবন্দি। বর্তমানে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৪ লাখ ৫৭ হাজার ৭০২ জন।
বন্যায় ৫৯ জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়েছে, মৃত ৫৯ জনের জনের মধ্যে পুরুষ ৪১ জন, নারী ছয় জন ও শিশু ১২টি। এদের মধ্যে কুমিল্লায় মারা গেছেন ১৪ জন, ফেনীতে ২৩ জন, চট্টগ্রামে ছয় জন, খাগড়াছড়িতে একজন, নোয়াখালীতে ৯ জন, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় একজন, লক্ষীপুরে একজন ও কক্সবাজারে তিনজন এবং মৌলভীবাজারে একজন। এছাড়া মৌলভীবাজারে একজন নিখোঁজ রয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে।
তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, বন্যায় পানিবন্দি বা ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের আশ্রয় প্রদানের জন্য মোট ৩ হাজার ৯২৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মোট ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৩০৫ জন লোক এবং ৩৬ হাজার ১৩৯টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
বন্যা কবলিত ১১টি জেলার ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য মোট ৫১৯টি মেডিক্যাল টিম চালু রয়েছে জানিয়ে বিবরণীতে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৪ কোটি ৫২ লাখ নগদ টাকা এবং ২০ হাজার ৬৫০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৩৫ লাখ টাকা শিশু খাদ্যের জন্য ও ৩৫ লাখ টাকা গো-খাদ্যের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এতে আরও জানো হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক কর্তৃক সংগৃহীত মোট এক লাখ ৪০ হাজার ৯০০ প্যাকেট শুকনা খাবার, কাপড় ও পানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের (ডিডিএম) মাধ্যমে বন্যা কবলিত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। ডিডিএম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
বন্যা আক্রান্ত জেলাসমূহের প্রশাসকদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে একসাথে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সশস্ত্রবাহিনী কর্তৃক বন্যা দুর্গত এলাকায় দুই লাখ, ৩৬ হাজার ৩২৮ প্যাকেট ত্রাণ ও ২০ হাজার ৪১০ প্যাকেট রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। মোট ৪২ হাজার ৮১৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে ও ২৩ হাজার ৫৭০ জনকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়াও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ১৫৩ জনকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে। সশস্ত্রবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত মোট ২৪টি ক্যাম্প ও ১৮টি মেডিক্যাল টিম বন্যা উপদ্রুত এলাকায় চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। এছাড়া খাবার পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, কাপড়, ঔষধ, বেবি ফুড ও স্যানিটারী আইটেম ইত্যাদি বিতরণ করা হয়েছে।
সার্বিকভাবে দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরছেন। বন্যা দুর্গত জেলাগুলোতে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে বলেও তথ্যবিবরণীতে জানানো হয়েছে।
এছাড়ও বন্যা পরবর্তী পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব রোধ করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুম সার্বক্ষণিক চালু রয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে।