জাতীয়

পিলখানা হত্যাকান্ড : পুন:তদন্তসহ ৭ দফা দাবি নিহত সেনা সদস্যদের পরিবারের

ঢাকা, ওপেন প্রেস ডেস্ক : রাজধানীর পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে ২০০৯ সালে বিদ্রোহ হত্যাকান্ডের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ, ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা এবং দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন নিহত সেনা সদস্যদের স্বজনরা।

আজ ১৭ আগস্ট, ২০২৪ শনিবার রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব দাবি করেন। এ সময় নিহত সেনা সদস্যদের স্বজনরা বক্তৃতায় এই হত্যাকান্ডের পুন:তদন্তসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। খবর বাসস।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তাদের সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, ‘সত্য উদঘাটনের ক্ষেত্রে শহীদ পরিবার মনে করে, আগে যেসব তদন্ত হয়েছে, সেসব তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।’

তারা বলেন, ‘ন্যায়বিচারের আলোকে আমরা শহীদ পরিবার মনে করি, হাইকোর্ট ডিভিশনের রায় মোতাবেক তিন জন জজ যে তদন্ত কমিশনের কথা বলেছেন, অবিলম্বে সেই তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। অফিসিয়াল গেজেট করে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। গেজেটে  শাহাদাত বরণকারী সবাইকে শহীদের মর্যাদা দিতে হবে। ২৫ ফেব্রুয়ারিতে দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে। এই নৃশংস বর্বর পিলখানা ট্র্যাজেডিকে স্কুলের পাঠ্যবইয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, এতে আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে কী ছিল এসব শহীদের ত্যাগ। এছাড়া এ ঘটনাকে ঘিরে যেসব সেনা কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন, তাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে অথবা যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আমাদের সপ্তম  দাবি হলো, নির্দোষ কোনও বিডিআর জওয়ানকে যেন কোনোভাবেই সাজা না দেওয়া হয়।’

সংবাদ সম্মেলনে পিলখানায় নিহত সেনা অফিসার শফিকের ছেলে আইনজীবী সাকিবুর, বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন এবং নিহত বিডিআর কেন্দ্রীয় সুবেদারের ছেলে আব্দুল হান্নানসহ নিহত সেনা সদস্যদের ভাই, স্ত্রী, ও সন্তানরা বক্তব্য দেন। এছাড়াও বিডিআর বিদ্রোহ চলাকালে প্রত্যক্ষদর্শী লে. কর্ণেল (অব) সৈয়দ কামরুজ্জামান বক্তৃতা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিডিআরের সাবেক ডিজি জেনারেল শাকিলের ছেলে রাকিন বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে একজন দায়িত্বরত প্রধানমন্ত্রী একটি বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে ৫৭ সেনা অফিসারদের হত্যা করেন। এ জন্যই আমরা শহীদ দিবস দাবি করছি। ১৫ বছরে যা তদন্ত হয়েছে, তা আমরা মানি না। কারণ, প্রধান হত্যাকারী যে নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি তখন ক্ষমতায় ছিলেন। পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকা-ের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ ফজলে নূর তাপস ও শেখ সেলিমসহ অনেকে সরাসরি জড়িত ছিলেন। এ ঘটনায় যারা নির্দোষ, এখনও জেল খাটছেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাই।’

এ সময় নিহত সেনা কর্মকর্তা কর্নেল শফিকের ছেলে এডভোকেট সাকিব রহমান বলেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম বিডিআর হত্যাকা-ের তদন্ত কমিটিতে ছিলেন। যে রিপোর্টটি প্রকাশ করেছেন, সেটিও সংশোধনের পর মিডিয়ায় দেওয়া হয়েছিল। সেই রিপোর্টের অরিজিনাল কপি প্রকাশের দাবি জানান তিনি ।

নিহত পরিবারের সদস্যরা বলেন, হত্যকা-ের ঘটনায় ডাল-ভাত নিয়ে দ্বন্দ্বের যে কথা প্রচার করা হয়, তা সত্য নয়। এ হত্যাকা-টিকে ভিন্নখাতে নিতেই এমন কথা প্রচার করা হয়েছিল।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার ৫০ দিনের মধ্যেই ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ হয়।

বিদ্রোহী বিডিআর সৈন্যরা পিলখানায় বিডিআর সদর দফতর দখল করে বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা ও ১৭ জন বেসামরিক লোককে হত্যা করে। তারা বেসামরিক লোকদের ওপর গুলি চালিয়েছিল, তারা অনেক অফিসার এবং তাদের পরিবারকে জিম্মি করেছিল, স্থাপনা ও সম্পদ ভাঙচুর করেছিল এবং মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে। সরকারের সঙ্গে একাধিক আলাপ-আলোচনার পর বিদ্রোহীরা অস্ত্র সমর্পণ করে এবং জিম্মিদের মুক্তি দেয়।

Share

Follow us