কুশলের ব্যাটিং ও থুশারার হ্যাট্টিকে শ্রীলংকার কাছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারলো বাংলাদেশ
সিলেট, (৯ মার্চ ২০২৪) ওপেন প্রেস ডেস্ক/ বাসস : প্রথমে ওপেনার কুশল মেন্ডিসের দুর্দান্ত ব্যাটিং এবং পরে পেসার নুয়ান থুশারার হ্যাট্টিকে শ্রীলংকার কাছে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারলো স্বাগতিক বাংলাদেশ। আজ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে শ্রীলংকার কাছে ২৮ রানে হেরেছে টাইগাররা। ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারলো বাংলাদেশ। শ্রীলংকার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বপ্ন এবারও পূরণ হলো না। হ্যাট্টিকসহ ২০ রানে ৫ উইকেট নেন স্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া থুশারা। প্রথম ম্যাচ শ্রীলংকা ৩ রানে এবং পরেরটিতে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জিতেছিলো।
কুশলের হাফ-সেঞ্চুরিতে সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৪ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় শ্রীলংকা। ৬টি করে চার-ছক্কায় ৫৫ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৮৬ রানের ইনিংস খেলেন কুশল। জবাবে থুশারার হ্যাট্টিকে ৩২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। তারপরও রিশাদ হোসেনের ৩০ বলে ৫৩ রানের ইনিংসে শেষ পর্যন্ত ১৪৬ রানে তুলে বড় ব্যবধানে হারের লজ্জা থেকে রক্ষা পায় টাইগাররা।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। আগের দুই ম্যাচেও টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করেছিলো টাইগাররা। মাশরাফি বিন মর্তুজা ও মাহমুদুল্লাহর পর বাংলাদেশের তৃতীয় অধিনায়ক হিসেবে তিন ম্যাচ সিরিজের সবগুলোতেই টস জিতলেন শান্ত।
শ্রীলংকান ওপেনার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে ৮ রানে শিকার করে ইনিংসের চতুর্থ ওভারে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার তাসকিন আহমেদ। এরপর একই ওভারের শেষ চার বলে তিনটি চার আদায় করে নেন ক্রিজে নতুন আসা কামিন্দু মেন্ডিস। ১ উইকেটে ৪১ রান নিয়ে পাওয়ার প্লে শেষ করে শ্রীলংকা।
বাংলাদেশী বোলারদের সামাল দিয়ে বড় জুটির ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন আরেক ওপেনার কুশল ও কামিন্দু। তবে অষ্টম ওভারে কামিন্দুকে (১২) থামিয়ে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন স্পিনার রিশাদ হোসেন।
কামিন্দু ফেরার পর বাংলাদেশের বোলারদের উপর চড়াও হন কুশল ও নতুন ব্যাটার শ্রীলংকার অধিনায়ক হাসারাঙ্গা ডি সিলভা। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৩১ বলে দ্রুত ৫৯ রান তুলেন তারা। এরই মধ্যে ২৫ বলে টি-টোয়েন্টিতে ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন কুশল।
কুশলের হাফ-সেঞ্চুরিতে ১২তম ওভারে দলীয় ১শ রানের কোটা স্পর্শ করে শ্রীলংকা। পরের ওভারে কুশল-হাসারাঙ্গার জমে যাওয়া জুটি ভাঙ্গেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। ১টি করে চার-ছক্কায় ১৩ বলে ১৫ রান তুলে আউট হন হাসারাঙ্গা।
অধিনায়ক ফেরার পর চারিথ আসালঙ্কা ব্যক্তিগত ৩ রানে ফিরলেও শ্রীলংকার রানের চাকা সচল রাখেন কুশল। টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে ১৭তম ওভারে তাসকিনের দ্বিতীয় শিকার হন ৬টি করে চার-ছক্কায় ৫৫ বলে ৮৬ রান করেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া কুশল।
দলীয় ১৪০ রানে কুশল ফেরার পর শেষ ১৯ বলে ৩৩ রানের সুবাদে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৭৪ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পায় শ্রীলংকা। এরমধ্যে মুস্তাফিজের করা শেষ ওভার থেকে ১৪ রান পায় শ্রীলংকা।
শেষদিকে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ৭ বলে ১টি ছক্কায় ১০, দাসুন শানাকা ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৯ বলে ১৯ এবং সাদিরা সামারাবিক্রমা অপরাজিত ৭ রান করেন। বাংলাদেশের তাসকিন ২৫ রানে ও রিশাদ ৩৫ রানে ২টি করে এবং শরিফুল ২৮ রানে ও মুস্তাফিজ ৪৭ রানে ১টি করে উইকেট নেন।
সিরিজ জয়ের জন্য ১৭৫ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে তৃতীয় ওভারে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তৃতীয় ওভারের প্রথম ডেলিভারির পর ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন ম্যাথুজ। তার জায়গায় ওভারের বাকী পাঁচ বল করতে আক্রমনে আসেন স্পিনার ধনাঞ্জয়া। প্রথম ডেলিভারিতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ১টি চারে ৭ রান করা লিটন দাস।
ইনিংসের চতুর্থ ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসে হ্যাট্টিক করে বাংলাদেশকে লন্ডভন্ড করে দেন পেসার থুশারা। দ্বিতীয় বলে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুলকে ১ রানে বোল্ড, তৃতীয় ডেলিভারিতে তাওহিদ হৃদয়কে শূণ্যতে বোল্ড এবং চতুর্থ বলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে খালি হাতে লেগ বিফোর আউট করে হ্যাট্টিক পূর্ণ করেন এই সিরিজে প্রথম খেলতে নামা থুশারা।
পঞ্চম শ্রীলংকান ও টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে ৫৭তম হ্যাট্টিকের নজির গড়েন ৭টি ম্যাচ খেলা থুশারা। এছাড়া বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে হ্যাট্টিক করা ষষ্ঠ বোলার হলেন তিনি।
পরের ওভারে ১১ রানে সৌম্যকেও বোল্ড করেন থুশারা। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা পারফরমার জাকের আলিকে ৪ রানে বিদায় করে বাংলাদেশকে খাদের কিনারায় ঠেলে দেন হাসারাঙ্গা। ৩২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে টাইগাররা। টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে কম ৬ রানে উইকেট হারালো বাংলাদেশ। আগেরটি ২০১১ সালে মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়েছিলো টাইগাররা।
হারের মুখে ছিটকে পড়া বাংলাদেশকে খেলায় ফেরানোর চেষ্টা করেন রিশাদ। সপ্তম উইকেটে মাহেদিকে নিয়ে ৩১ বলে ৪৪ এবং অষ্টম উইকেটে তাসকিনের সাথে ২১ বলে ৪১ রান যোগ করেন রিশাদ।
স্পিনার থিকশানার করা ১৫তম ওভারে ৩টি ছক্কা মারা রিশাদ, ২৬ বলে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ পান । আফিফ হোসেনের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে আট বা এরপর নেমে হাফ-সেঞ্চুরি করলেন রিশাদ। ১৭তম ওভারে দলীয় ১১৭ রানে থিকশানার বলে আউট হওয়ার আগে ৭টি ছক্কায় ৩০ বলে ৫৩ রান করেন রিশাদ।
রিশাদ ফেরার পর তাসকিনের ২১ বলে ৩১ রানের সুবাদে হারের ব্যবধান কমিয়ে ১৪৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। শ্রীলংকাার থুশারা ৪ ওভারে ২০ রানে ৫ উইকেট নেন। ৮ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এই প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন থুশারা।
আগামী ১৩ মার্চ থেকে চট্টগ্রামে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামবে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা।
শ্রীলংকা ইনিংস :
ধনাঞ্জয়া ক সৌম্য ব তাসকিন ৮
কুশল ক সৌম্য ব তাসকিন ৮৬
কামিন্দু ক শরিফুল ব রিশাদ ১২
হাসারাঙ্গা ক শরিফুল ব মুস্তাফিজুর ১৫
আসালঙ্কা ক মুস্তাফিজুর ব শরিফুল ৩
ম্যাথুজ ক সৌম্য ব রিশাদ ১০
শানাকা রান আউট ১৯
সামারাবিক্রমা অপরাজিত ৭
অতিরিক্ত (বা-৫, লে বা-১, ও-৮) ১৪
মোট (৭ উইকেট, ২০ ওভার) ১৭৪
উইকেটের পতন : ১-১৮ (ধনাঞ্জয়া), ২-৫২ (কামিন্দু), ৩-১১১ (হাসারাঙ্গা), ৪-১৩৩ (আসালঙ্কা), ৫-১৪০ (কুশল), ৬-১৫২ (ম্যাথুজ), ৭-১৭৪ (শানাকা)।
বাংলাদেশ বোলিং :
শরিফুল : ৪-০-২৮-১ (ও-১),
তাসকিন : ৪-০-২৫-২,
মাহেদি : ৩-০-২২-০,
মুস্তাফিজ : ৪-০-৪৭-১ (ও-২),
রিসাদ : ৪-০-৩৫-২,
সৌম্য : ১-০-১১-০।
বাংলাদেশ ব্যাটিং ইনিংস :
লিটন ক শানাকা ব ধনাঞ্জয়া ৭
সৌম্য ব থুশারা ১১
নাজমুল ব থুশারা ১
হৃদয় ব থুশারা ০
মাহমুদুল্লাহ এলবিডব্লু ব থুশারা ০
জাকের এলবিডব্লু ব হাসারাঙ্গা ৪
মাহেদি ব হাসারাঙ্গা ১৯
রিশাদ ক সামারাবিক্রমা ব থিকশানা ৫৩
তাসকিন ক ডি সিলভা ব শানাকা ৩১
শরিফুল ক শানাকা ব থুশারা ৪
মুস্তাফিজুর অপরাজিত ৭
অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-১, ও-৭) ৯
মোট (অলআউট, ১৯.৪ ওভার) ১৪৬
উইকেটের পতন : ১-১৩ (লিটন), ২-১৫ (নাজমুল), ৩-১৫ (হৃদয়), ৪-১৫ (মাহমুদুল্লাহ), ৫-২৪ (সৌম্য), ৬-৩২ (জাকের), ৭-৭৬ (মাহেদি), ৮-১১৭ (রিশাদ), ৯-১৩৪ (শরিফুল), ১০-১৪৬ (তাসকিন)।
শ্রীলকা ইনিংস :
ম্যাথুজ : ১.১-০-৫-০ (ও-১),
বিনুরা : ৪-০-৩৯-০ (ও-১),
ধনাঞ্জয়া : ০.৫-০-২-১ (ও-১),
থুশারা : ৪-১-২০-৫ (ও-২),
হাসারাঙ্গা : ৪-০-৩২-২,
থিকশানা : ৪-০-৩৫-১,
শানাকা : ১.৪-০-১১-১ (ও-১)।
ফল : শ্রীলংকা ২৮ রানে জয়ী।
সিরিজ : তিন ম্যাচ সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জয়ী শ্রীলংকা।