রাজনীতি

 সংখ্যালঘু স্বার্থবিরোধীদের কোনভাবেই ভোট দেয়া যাবে না : ঐক্য পরিষদ

সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার পক্ষের প্রার্থীদের ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত
সংখ্যালঘু স্বার্থবিরোধীদের কোনভাবেই ভোট দেয়া যাবে না : ঐক্য পরিষদ

রওশন ঝুনু : বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব প্রার্থী ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠার পক্ষের বলে বিবেচিত হবেন তাদেরকে সমর্থন দানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি অতীতে যেসকল রাজনৈতিক ব্যক্তি সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ ভূমিকা পালন করেছেন এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জায়গা-জমি জবরদখল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও নির্যাতনে যুক্ত থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে সংখ্যালঘু স্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত থেকে বর্তমানে প্রার্থী হয়েছেন তাদের ভোট না দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

আজ(২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, শনিবার সকালে ঢাকার ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে সংগঠন আয়োজিত কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় আসন্ন নির্বাচনে প্রচারণায় কোনো পর্যায়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট ব্যাবহার করে কোনো ধরণের নির্বাচনী কার্যকলাপে কোনো প্রার্থীর পক্ষে অংশগ্রহণ না করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নানান প্রার্থী ছাড়াও একই রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মধ্যে ইতোমধ্যে সংঘাতের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে এবং অতীতের নির্বাচনের পূর্বাপর দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতার আলোকে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের শঙ্কা ও উদ্বেগ বিরাজ করছে বিধায় আসন্ন নির্বাচনের পূর্বাপর অন্তত তিন সপ্তাহ সারাদেশে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন রাখার জন্য নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে।  নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রোধে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি জিরো টলারেন্সের প্রত্যাশা করেছে।

সভায় গৃহীত এক প্রস্তাবে এ মর্মে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় যে, ধর্মকে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চলমান নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এ ব্যাপারে অনতিবিলম্বে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে কঠোর পদক্ষেপ কামনা করছে।

সভায় নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে ৭২-র সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছাড়াও সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকারের প্রতিশ্রুতি দেয়ার উপর জোর গুরুত্ব আরোপ করা হয় এবং বলা হয়, অতীতে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে দলের উদ্যোগ ‘নেওয়া না নেওয়া’ পর্যালোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সভায় কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও বর্তমানে নির্বাচনে প্রার্থী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের নির্বাচনী প্রচারণায় সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে যেসব উষ্কানীমূলক বক্তব্য ও হুমকি প্রদান করা হচ্ছে তাতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং এ ব্যাপারে নির্বাচনের পূর্বাপর সংখ্যালঘুদের নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে ভোটদানের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।

সভায় কাজল দেবনাথ ও রঞ্জন কর্মকারকে যথাক্রমে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় নির্বাচনী মনিটরিং সেল গঠন করা হয় যারা নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচন পরবর্তী ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা, নির্যাতন এবং বিভিন্ন ধরণের সংঘাতের তাৎক্ষণিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এবং একটি প্রতিবেদন তৈরী করবেন। প্রতিটি জেলায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট মনিটরিং সেল থাকবে যারা তথ-উপাত্ত সংগ্রহ ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্তের সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশের পর দীর্ঘ চার ঘন্টাব্যাপী আলোচনা হওয়ার পর সিদ্ধান্তাবলী গৃহীত হয়।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক, প্রেসিডিয়াম সদস্য বাসুদেব ধর, রঞ্জন কর্মকার, মিলন দত্ত, মঞ্জু ধর, হীরেন্দ্রনাথ সমাজদার হীরু, জে এল ভৌমিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, জয়ন্ত কুমার দেব, কিশোর রঞ্জন মণ্ডল, হরিচাঁদ মণ্ডল সুমন, রমেন মণ্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক উত্তম চক্রবর্তী, দীপঙ্কর ঞোষ, সাগর হালদার প্রমুখ।

Share

Follow us