আর্ন্তজাতিক

রাশিয়া যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করেছে অভিযোগ জেলেনস্কির

ঢাকা, (১৯ মার্চ, ২০২৫), ওপেন প্রেস ডেস্ক/বাসস : ইউক্রেন বুধবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন-সমর্থিত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের অভিযোগ করেছে। জ্বালানি গ্রিডে হামলা বন্ধ করা সংক্রান্ত যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কয়েক ঘন্টা পরেই বেসামরিক অবকাঠামোতে মস্কোর হামলার খবর জানিয়েছে ইউক্রেন।

কিয়েভ থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

তিন বছর ধরে চলমান এই যুদ্ধের বৃহত্তর নিষ্পত্তির দিকে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ওয়াশিংটন ৩০ দিনের পূর্ণ যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিচ্ছে।

তবে মঙ্গলবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ৯০ মিনিটের এক ফোনালাপে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তা কার্যত প্রত্যাখ্যান করেছেন। যেকোনো মীমাংসার জন্য আরও কঠিন শর্ত আরোপ করছেন তিনি।

পুতিন জোর দিয়ে বলেছেন, এই ধরনের যেকোনো চুক্তি পশ্চিমাদের ইউক্রেনের জন্য সমস্ত সামরিক সহায়তা বন্ধ করার ওপর নির্ভরশীল। রাশিয়ান নেতা বলেন, ইউক্রেনের সাথে বিদেশি সামরিক সাহায্য এবং গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি বন্ধ হলেই কেবল যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে।

ক্রেমলিন জানিয়েছে, পুতিন ইতোমধ্যেই তার সেনাবাহিনীকে ৩০ দিনের জন্য ইউক্রেনীয় জ্বালানি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

বহুল প্রত্যাশিত পুতিন-ট্রাম্প ফোনালাপের পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বুধবার ১৭৫ জন করে বন্দী বিনিময় করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

জেলেনস্কি প্রস্তাবিত জ্বালানি অবকাঠামোর আওতাভুক্ত যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানালেও তিনি ওয়াশিংটনের কাছ থেকে এ সম্পর্কে তার আরও ‘বিস্তারিত’ জানা প্রয়োজনের কথা ব্যক্ত করেছেন।

যুদ্ধ চলাকালে মস্কো ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে বিধ্বংসী আক্রমণ চালিয়েছে, অন্যদিকে ইউক্রেন রাশিয়ার একাধিক তেল স্থাপনায় বোমা হামলা চালানোর জন্য ড্রোন ব্যবহার করেছে।

ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে আলাপের কয়েক ঘন্টা পরেই ইউক্রেনে বিস্ফোরণ ও বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠে।

জেলেনস্কি বলেন, ‘বিশেষ করে বেসামরিক অবকাঠামোতে আঘাত হেনেছে’। সুমির একটি হাসপাতালও হামলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। জেলেনস্কি আরো বলেন, ‘রাশিয়ার এই ধরণের রাতের আক্রমণই আমাদের জ্বালানি খাত, আমাদের অবকাঠামো এবং ইউক্রেনীয়দের স্বাভাবিক জীবন ধ্বংস করে দেয়।’

তিনি বলেন, ‘আজ, পুতিন কার্যকরভাবে পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।’

কিয়েভে, ইউক্রেনীয়রা পুতিনের কাছ থেকে কোনও ছাড় পাওয়ার ব্যাপারে সন্দিহান। ৩২ বছর বয়সী লেভ শোলোদকো বলেছেন, জ্বালানি অবকাঠামোও রেহাই পাবে তিনি তা আশা করেন না। তিনি বলেন, ‘আমি পুতিনকে মোটেও বিশ্বাস করি না, একেবারেই না। তিনি কেবল শক্তি বোঝেন।’

ট্রাম্প জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকে পুতিনের সাথে তার ‘বোঝাপড়া’ আছে বলে দাবি করেন এবং তিনি ইউক্রেন যুদ্ধে একটি অগ্রগতির চেষ্টা করছেন বলে জানান।

সংঘাতের অবসান ঘটাতে রাশিয়ার সাথে সরাসরি আলোচনা শুরু করার ঘোষণা দিয়ে তিনি বিশ্বকে হতবাক করে দেন। তবে তিনি মস্কোর দিকে খুব বেশি ঝুঁকছেন বলে মিত্রদের মধ্যে আশঙ্কা জাগিয়ে তোলেন।

পুতিনের সাথে তার সর্বশেষ ফোনালাপকে ‘ভালো এবং ফলপ্রসূ’ বলে প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাশিয়ান নেতা ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে জ্বালানি অবকাঠামোতে হামালা চালানো বন্ধ রাখতে সম্মত হয়েছেন।

তবে মস্কো আরও জোর দিয়ে বলেছে, ইউক্রেনের যুদ্ধরত সেনাবাহিনীকে পশ্চিমা সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তার ‘সম্পূর্ণ বন্ধ’ করার ওপর পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি নির্ভরশীল। ক্রেমলিনের এক বিবৃতিতে আরো জোর দেওয়া হয়েছে যে, কিয়েভ যুদ্ধবিরতির সময় সশস্ত্র বা সক্রিয় হতে পারবে না।

গত সপ্তাহে সৌদি আরবে আলোচনার সময় পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণকারী জেলেনস্কি চুক্তিতে পৌঁছাতে রাশিয়ার অনীহার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা এই যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত নয় এবং আমরা তা দেখতে পাচ্ছি।’

গত বছর কিয়েভ আংশিকভাবে দখল করে নেওয়া এলাকায় রাশিয়ার বড় অগ্রগতির কয়েকদিন পর জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনীয় সৈন্যরা রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে যতদিন প্রয়োজন যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।

মঙ্গলবার রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী এর আগে বেলগোরোদ অঞ্চলে স্থল আক্রমণের চেষ্টা করলে তাদের পিছু হটিয়ে দেওয়া হয়। রাশিয়া ওই অভিযানকে  ট্রাম্পের আলোচনা দুর্বল করার প্রচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছে।

ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করার জন্য তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে আগ্রহী ট্রাম্প যুদ্ধে ইন্ধন যোগানোর জন্য তার পূর্বসূরি জো বাইডেনের রাশিয়া নীতিকে দায়ী করেছেন।

তবে পুতিন যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত কিনা তা নিয়ে পশ্চিমা ইউক্রেন মিত্ররা এখনও সন্দিহান।

ক্রেমলিনের বিবৃতির পর জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা পাঠানো অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ বলেন, ‘ইউক্রেন আমাদের ওপর নির্ভর করতে পারে।’

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ‘যুক্তরাজ্যের অটল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন’।

আলোচনা চলাকালীন, ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইনে থাকা সৈন্যরাও রাশিয়ার ওপর সন্দেহ ব্যক্ত করেছেন।

যুদ্ধে আহত হওয়ার পর দোনেৎস্ক অঞ্চলে সামরিক প্রশিক্ষণে ফিরে আসা ৩৫ বছর বয়সী ওলেকসান্ডার বলেন, ‘এমন লোকদের আপনি কীভাবে বিশ্বাস করতে পারেন যারা আপনার ওপর আক্রমণ করে শিশুসহ বেসামরিক লোকদের হত্যা করেছে?’

Share

Follow us