নানা অব্যবস্থাপনায় বিএসএমএমইউ’র আউটডোর সেবা ব্যাহত হচ্ছে
ঢাকা, (৪ ডিসেম্বর, ২০২৪), ওপেন প্রেস ডেস্ক/বাসস : ডাক্তারের অভাব, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি ও এজেন্টদের দৌরাত্ম্য এবং অব্যবস্থাপনার কারণে ব্যাহত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) আউটডোর সেবা। দীর্ঘ লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না, আউটডোরে সেবা নিতে আসা রোগীরা।
বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভদের বিপুল উপস্থিতি, চিকিৎসকের স্বল্পতা ও এজেন্টদের দৌরাত্ম্যে হাসপাতাল থেকে টিকিট কেটেও সংশ্লিষ্ট আউটডোর চিকিৎসকের কক্ষে পৌঁছাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় রোগীদের। ভোগান্তির শেষ থাকে না তাদের। মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদেরকে প্রায়শই আউটডোর চিকিৎসকদের কক্ষে ঘন ঘন অনুপ্রবেশ করতে দেখা যায়। আর এ কারণে রোগীদের ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট হয়। চিকিৎসার জন্য আসা রোগীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়।
ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানীগুলো সাধারণত ডাক্তারদের প্রভাবিত করে তাদের নিজ নিজ কোম্পানির ওষুধ লিখতে এই প্রতিনিধিদের পাঠিয়ে থাকে।
রোগীদের অভিযোগ- পুলিশ, আনসার সদস্য এবং হাসপাতালের কর্মকর্তাদের কঠোর নজরদারির মধ্যেও হাসপাতালের আউটডোর এলাকায় এক ধরনের দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে। তাদের অভিযোগ, এমনকি এজেন্টরা রোগীদের বিভিন্ন সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়। কিন্তু টাকা নেওয়ার পরে, তারা রোগীদের সাহায্য করে না। রোগীরা আরও অভিযোগ করে বলেন, তারা চিকিৎসার্থে হাসপাতাল এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে অব্যবস্থাপনার মুখোমুখি হচ্ছেন। এভাবে অনেক বেশি সময় নষ্ট হওয়ায়, বিশেষ করে বয়স্ক রোগীদেও দারুণ ভোগান্তি পোহাতে হয়।
দুটি আউটডোর থাকায় প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে আসেন।
কথা হয়, সাভার থেকে চিকিৎসা নিতে আসা নুরুল হক ও তার স্ত্রী সালেহা বেগমের সাথে। সালেহার স্বামী কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। তিনি জানান, একজন এজেন্ট বা দালাল তাদের ডাক্তারের কাছে যেতে সাহায্য করার জন্য ২০০ টাকা নিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি তাদের সাহায্য পাননি।
জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লা থেকে হাসপাতালে আসেন সাফিয়া বেগম। তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন কিন্তু এখনও ডাক্তারের কাছে যেতে পারেননি। কারণ বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা ঘন ঘন চিকিৎসকের কক্ষে প্রবেশ করায় রোগীরা চিকিৎসকের কাছে যেতে পারছেন না।
আরেক রোগী শাহ আলমকে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে খাকতে ক্লান্ত দেখা যায়। তিনি বলেন, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা বিনা বাঁধায় চিকিৎসকদের কক্ষে প্রবেশ করছেন। ফলে রোগীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়।
বিএসএমএমইউ’র ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক মোঃ সায়েদুর রহমান বলেন, প্রচুর ভিড় কখনো কখনো রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা সেবা প্রদানে বাঁধা সৃষ্টি করে। কারণ প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ১০ হাজার রোগী এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন। তিনি চিকিৎসকের ঘাটতির কথাও স্বীকার করে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসকের অভাব রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে সর্বোত্তম কাজ করার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি।
পাশাপাশি তিনি আউটডোর টিকিটের মূল্য ছাড়া কাউকে অতিরিক্ত টাকা না দেওয়ার জন্য রোগীদের প্রতি আহ্বান জানান। রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে উপাচার্য বলেন, তারা দ্রুত চিকিৎসকদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করবেন।