মানবাধিকার নিয়ে জাতিসংঘের এসআর’দের মন্তব্য ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ওপেন প্রেস ডেস্ক : সরকার বলেছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতিসংঘের তিনজন স্পেশাল রিপোর্টার (এসআর) এর মন্তব্য সরকাবের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়ার উদ্দেশ্যে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যে পরিপূর্ণ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে আজ ২১ নভেম্বর, ২০২৩ মঙ্গলবার বলা হয়, ‘তাদের একতরফা পর্যবেক্ষণগুলি অসৎ উদ্দেশ্যমূলক, বিশেষ করে তাদের সাথে সরকারের সক্রিয় যোগাযোগের প্রেক্ষাপটে তাদের যে মন্তব্য, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’ বাসস
এতে বলা হয়েছে, ওএইচসিএইচআর কর্তৃক ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি থেকে উত্তরণের সুযোগ হিসেবে মানবাধিকার কাউন্সিলের পর্যালোচনাকে আমলে নিতে বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছেন’ শীর্ষক একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির প্রতি বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। ওএইচসিএইচআর-এর ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি তিনজন জাতিসংঘের বিশেষ রিপোর্টার (এসআর)- আইরিন খান, মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রচার ও সুরক্ষার বিষয়ক এসআর, ক্লেমেন্ট নাইলেতসোসি ভউল, শান্তিপূর্ণ সভা-সামাবেশ করার স্বাধীনতার অধিকারের বিষয়ক এসআর এবং মেরী ল’লোর, মানবাধিকার রক্ষাকারীদের পরিস্থিতির বিষয়ক এসআর দ্বারা করা পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্য এবং বিষয়বস্তু সম্পর্কে সরকারকে প্রশ্ন তুলতে বাধ্য করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এসআর’দের মন্তব্য সম্বলিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিটিতে তাদের সম্ভাব্য উদ্দেশ্যগুলির পাশাপাশি সময়টিও বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরো বলা হয়, তারা এমন এক সময়ে দেশের মানবাধিকার নিয়ে তাদের মন্তব্য করলো, যখন বাংলাদেশের সর্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনা (ইউপিআর) সবেমাত্র আগের দিন ১৩ নভেম্বর ২০২৩-এ সমাপ্ত হয়েছে এবং সিংহভাগ দেশ মূল আইন, নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। মানবাধিকারের অগ্রগতির জন্য দেশের জনগণের সুপারিশ অনুযায়ীই এ প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এসআর-এর প্রেস নোটের বিষয়বস্তু মূলত বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষত বর্তমান শ্রমিক অসন্তোষ ও রাজনৈতিক সহিংসতা এবং অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস ও আদিলুর রহমান খান, রোজিনা ইসলামের মতো ব্যক্তিদের মামলার বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ।
বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম দেশ, যেখানে আইনের শাসন বিরাজ করছে এবং সেই অনুযায়ী তিনটি মামলা স্বাধীন বিচার বিভাগের আইন আদালত দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। এতে সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। বিবৃতিটিতে বলা হয়েছে, বিশেষত ডক্টর ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলাটি তার মালিকানাধীন একটি কোম্পানির শ্রমিকদের লাভের ন্যায্য অংশ থেকে তাদের বঞ্চিত করার। সুতরাং এটা আশ্চর্যজনক যে, এই এসআর’রা সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলছে, অথচ সরকার মূলত শ্রম ও মানবাধিকার রক্ষা করছে। অধিকন্তু ইউপিআর অধিবেশনে দেশে মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষার জন্য সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। এসআর’দের দ্বারা উত্থাপিত বেশিরভাগ ইস্যুরই সেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল যথাযথভাবে স্পষ্ট করেছিলো।
মানবাধিকার এজেন্ডা বাস্তবায়ন একটি অগ্রগতির কাজ বলে- জোর দিয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিলকে আশ্বাস দেয় যে, বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। অতএব, সরকার বুঝতে পারছে না যে, ইউপিআর এর সময় করা সুপারিশগুলির জন্য সরকারকে কোনো সময় না দিয়েই এতো তাড়াহুড়ো করে, এসআর’দের দ্বারা একই ধরনের মন্তব্য করার কী প্রয়োজন ছিলো। সরকার এসআর’দের আচরণকে তাদের নিজ নিজ ম্যান্ডেট ও এখতিয়ারের সাথে সম্পূর্ণ অসঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি নিরাপদ, উন্মুক্ত ও অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য মানবাধিকার কাউন্সিল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ওয়ার্কিং গ্রুপের রিপোর্ট গ্রহণে উচ্চ নৈতিক ভিত্তি বানাতে চায়।’
এতে আরো বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের এ আহ্বান, তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।’
তিন এসআর’এর মধ্যে একজন বাংলাদেশী এবং সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশের সমালোচনামূলক পর্যবেক্ষণ করার ক্ষেত্রে ‘অভূতপূর্ব মাত্রার’ উৎসাহ দেখিয়েছেন। অথচ অন্যান্য দেশের এই ইস্যুগুলোতেই নীরবতা বজায় রেখেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে যে, ‘এতোটা আংশিক, পক্ষপাতমূলক, বিষয়ভিত্তিক ও অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে উপস্থাপনের ফলে এই এসআর’রা তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।’ বাংলাদেশ সরকার একটি চমৎকার কার্যকরী মানবাধিকার ব্যবস্থার দিকে বিশেষ পদ্ধতির ম্যান্ডেটধারীদের ভূমিকার প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশ আশা করছে যে, এসআর’রা তাদের দায়িত্বের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে, তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই প্ল্যাটফরম ব্যবহার না করার ব্যাপারে সতর্ক করতে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় তাদের সঠিক নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা করবে।