শিক্ষা

আইবিএ ভবনের দাবিতে আন্দোলন করছে জাবি’র শিক্ষার্থীরা

জাহাঙ্গীর নগর প্রতিনিধি : আইবিএ ভবনের দাবিতে আন্দোলন করছে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১২ নভেম্বর ২০২৩ রবিবার আইবিএ-জেইউ শিক্ষার্থীরা ভার্সিটি ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে। মিছিলটি সমাজবিজ্ঞান ভবন থেকে শুরু হয়ে নতুন রেজিস্ট্রার ভবন থেকে পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবন হয়ে আবার নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে এসে থামে। এ সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সাথে আন্দোলনের কারণ তুলে ধরেন আইবিএ ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী সিরাতুল মোস্তাকিম শ্রাবণী, রাকিবুল হাসান এবং আবু সাঈদ আবদুল্লাহ সামির।

তারা গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশে স্নাতক পর্যায়ে ব্যবসায় প্রশাসন শিক্ষার পথিকৃৎ, আইবিএ-জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবমণ্ডিত যাত্রা শুরু হয় ১৯৯১ সালে। তারপরও অবকাঠামোগত অনুন্নয়নের কারণে তিন দশকেরও বেশি পুরনো এই ইন্সটিটিউট পৃথক কোনো একাডেমিক ভবন ছাড়াই নানা সমস্যার মধ্যে তাদের একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে যা বৃহৎ পরিসরে শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রধান অন্তরায়। যাত্রা শুরু থেকেই আইবিএ-জেইউ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজবিজ্ঞান ভবনে একাডেমিক কার্যাবলী পরিচালনা করে আসছে। অথচ এই স্থানটি একাডেমিক এবং অন্যান্য সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রমের জন্য কিংবা প্রয়োজনীয় সুবিধাবলী পরিচালনায় একেবারেই অপ্রতুল। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে এই দুঃখজনক পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে? সেসব প্রশ্নকে পেছনে ফেলে আইবিএ নিজস্ব অর্থায়নে আইবিএ ভবন নির্মাণে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, মীর মোশাররফ হলগামী রাস্তার পাশের জায়গায় বরাদ্দ পেয়েছে। যা দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে সুবিশ্লেষিত আলোচনার মাধ্যমে প্রশাসন কর্তৃক সর্বশেষ সুনিশ্চিত করা হয়।

তারা বলেন, ২০১১ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. শরিফ এনামুল কবির, আইবিএকে পুরাতন রেজিস্টার ভবনটি তাদের নিজস্ব একাডেমিক ভবন হিসেবে হস্তান্তর করবেন- এই মর্মে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তী উপাচার্য প্রফেসর ড. ফারজানা ইসলাম সেই স্থানেই একটি ‘হেরিটেজ ভবন’নির্মাণের দোহাই দিয়ে আইবিএকে ভবনটি দিতে অস্বীকার করেন এবং নিজ অর্থায়নে ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে জায়গার দাবি করলে আইবিএ একাডেমিক ভবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বোটানিক্যাল গার্ডেনের সংলগ্ন একটি নতুন স্থান নির্ধারণ করে দেন। এই দাপ্তরিক নির্দেশ মোতাবেক, ২০১৭ সালে নির্ধারিত স্থানে নিজস্ব ভবনের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এর কিছুদিন পরেই, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি তথাকথিত মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে, যার অজুহাতে বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন স্থানটি পরিবর্তন করার নোটিশ জারি করা হয়। সে অনুযায়ী আইবিএ-জেইউ একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য মীর মোশাররফ হোসেন হল যাওয়ার রাস্তাসংলগ্ন স্থানটিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই সূত্রেই চলতি বছর সর্বশেষ বরাদ্দকৃত স্থানে জাহাঙ্গীরগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে উপাচার্য প্রফেসর ডক্টর মো. নুরুল আলম স্যার আবারো নতুন একটি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। সেখানে প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা, আইবিএ-জেইউ পরিচালক, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।বিধি এবারও বাম।

কারণ, সর্বশেষ প্রণয়নকৃত মাস্টারপ্ল্যানটির অস্তিত্ব ভিত্তিহীন বলে দাবি করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষার্থী। তারা আরও দাবি করেন, উক্ত মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী বরাদ্দকৃত আইবিএ ভবনের নির্মাণ কাজ প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্যাহত করবে। যদিও একই মাস্টারপ্ল্যানের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই লাইব্রেরি, রেজিস্ট্রার ভবন, স্পোর্টস কমপ্লেক্স এবং ছাত্রাবাসগুলির মতো বরাদ্দকৃত নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলি চলমান। অথচ মাস্টারপ্ল্যানের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই একাডেমিক ভবন নির্মিত হচ্ছে জানিয়ে আইবিএ-জেইউ প্রশাসনকে নিশ্চিত করেছে। প্রশাসনের নির্দেশ মোতাবেক প্রতিটি কাজ করার পরেও কতিপয় শিক্ষার্থী এমএইচ হল সংলগ্ন স্থানের ভিত্তিপ্রস্তরটি ভাঙচুর করে এবং নির্ধারিত স্থানে ভবনের নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে। প্রতিবাদের পাশাপাশি, তারা উপাচার্য এবং আইবিএ-জেইউ পরিচালককে তাদের ভবনে দীর্ঘ সাত ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার মতো হীন আচরণেও লিপ্ত হয়। যার মধ্য দিয়ে সম্মানিত শিক্ষকদের প্রতি তারা চূড়ান্ত অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে।

আন্দোলনরত এই তিন শিক্ষার্থী বলেন, এভাবে প্রতিবার স্বপ্ন দেখিয়ে সেই স্বপ্ন আবার একইভাবে ভেঙে দেওয়ার প্রতিবাদে আইবিএ-জেইউ এর সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে, আইবিএ-জেইউ এর শিক্ষার্থীরা এবার তাদের দাবি আদায়ের লড়াইয়ে মাঠে নামতে বাধ্য হয়েছে। যেকোনো মর্মে আইবিএ-জেইউ এর ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করতে হবে- এই মূল দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে মিছিলের আয়োজন করে, সকলে এক কণ্ঠে স্লোগানে সোচ্চার হয়ে ওঠে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইবিএ-জেইউ এর একাডেমিক ভবনটির তাৎক্ষণিক নির্মাণের দাবিতে সংহতি জানায়।

দৃঢ় সংকল্পের অংশ হিসেবে তারা তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা এবং যেকোনো সহপাঠ্য কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।তারা বলেন, বাংলাদেশের প্রথম সারির বিজনেস স্কুল, আইবিএ-জেইউ অসংখ্য সফল ব্যবসায় প্রশাসন শিক্ষার স্নাতক তৈরির কারিগর। যাঁরা বর্তমানে দেশে এবং বিদেশে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অত্যন্ত সফলভাবে বাংলাদেশ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করে চলেছেন। যথাযথ অবকাঠামোগত উন্নয়নই পারে এই সফলগাথাকে আরো ত্বরান্বিত করতে। কিন্তু সেই অবকাঠামোগত উন্নয়নের পথে চলমান চ্যালেঞ্জ, বাঁধা এবং ক্রমাগত ফাঁকা বুলির বিচ্ছিন্নতাই আজ শিক্ষার্থীদেরকে শ্রেণিকক্ষ ছেড়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য করেছে। তারা গণমাধ্যমকে বলেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর সেইসব শিক্ষার্থীই আজ একত্রিত হয়ে সম্মিলিত উচ্চকণ্ঠে তাদের একান্ত দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন।

আইবিএ-জেইউ এর প্রতিটি শিক্ষার্থী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সহযোগী সবাই সমস্বরে তাদের অবকাঠামোর উন্নয়নের দাবিতে সম্মিলিত আওয়াজ তুলে চলেছেন। একই সাথে, তারা তাদের ন্যায্য আন্দোলনের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে বিভিন্ন জায়গায় বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিস্তৃত সবুজ শামিয়ানা ধরে রাখার সচেষ্ট প্রয়াস অব্যাহত রেখেছেন। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্যামলসুন্দর প্রকৃতিকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকবে এবং ক্যাম্পাসের সবুজায়ন এবং টেকসইকরণে অবদান রাখবে।

Share

Follow us