অর্থ-বাণিজ্য

রাজস্ব বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীদের সরকারের প্রচেষ্টায় সহায়তা করার আহ্বান অর্থ উপদেষ্টার

ঢাকা, ওপেন প্রেস ডেস্ক : অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধিতে সরকারের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করার জন্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘এই আন্তর্জাতিক শুল্ক দিবস, ২০২৫-এ আমি সরকারের পক্ষ থেকে রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করার জন্য আপনাদের (ব্যবসায়ীদের) অনুরোধ করছি। শুধুমাত্র জোর করে রাজস্ব সংগ্রহ করলে চলবে না… যদি আপনাদের কোনো বকেয়া থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে তা যথাযথভাবে পরিশোধ করুন।’

আজ ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ রোববার  রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভবনের মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক শুল্ক দিবস-২০২৫’- শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা একথা বলেন। খবর বাসস।

এ সময় বিশ্ব শুল্ক সংস্থা (ডব্লিউসিও)’র মহাসচিব ইয়ান সন্ডার্সের একটি ভিডিও বার্তা এবং বাংলাদেশ কাস্টমসের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

এ বছরের আন্তর্জাতিক শুল্ক দিবসের প্রতিপাদ্য হলো- ‘কর্মক্ষমতা, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধির প্রতি কাস্টমস তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করছে’।

অর্থ উপদেষ্টা এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করেন যে, কর ও শুল্ক গ্রহণের সময় রাজস্ব কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো ‘বেআইনি’ বা ‘অযৌক্তিক’ দাবি উত্থাপন করা হবে না।

তিনি আরও বলেন, রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে ‘টেবিলের নিচ দিয়ে’ কোনো ধরনের ‘অযৌক্তিক’ দাবি উত্থাপন করা হবে না।

উপদেষ্টা বলেন, ‘যদি এই ধরনের ‘প্রতিপালন’ নিশ্চিত করা হয়, তাহলে আমি আশা করি যে, ব্যবসায়ীরাও আমাদের আরও বেশি সহায়তা করবেন।’

সেমিনারে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অর্থ সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার ও এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

এনবিআর সদস্য কাজী মোস্তাফিজুর রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং এনবিআর সদস্য হোসেন আহমেদ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

রাষ্ট্রীয় কোষাগার সমৃদ্ধ করার বিষয়টি একটি সম্মিলিত দায়িত্ব উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, করদাতাদের অর্থ কেবল করদাতাদের নিজেদের স্বার্থেই ব্যয় করা হবে না, বরং দেশবাসীর সামগ্রিক কল্যাণ ও কল্যাণমূলক কাজ নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও শিল্প উন্নয়নেও ব্যয় করা হবে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজস্ব আদায়ের কাজকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে ড. সালেহউদ্দিন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আগের চেয়ে আরও বেশি সক্রিয় হওয়ার আর এভাবে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

তিনি দেশ ও জনগণের কল্যাণে এই প্রতিযোগিতার যুগে সর্বোচ্চ সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজস্ব বাড়াতে এনবিআর কঠোর পরিশ্রম করছে এবং দুই থেকে তিন মাস পর আমরা এই অর্থ-বছরের প্রকৃত রাজস্ব আদায়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা পেতে পারব। এটি আমাদের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং এটা অর্জনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ও ‘দলগতভাবে’ কাজ করতে হবে।’

সাংবাদিকদের তাদের দায়িত্ব পালনে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তে তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নিশ্চিতভাবেই সাধারণ মানুষ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারণ সকল পণ্যের দাম তাদের নাগালের মধ্যে নেই। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু এর মধ্য থেকেই আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’

দেশের রাজস্ব আদায়ের অবস্থা প্রসঙ্গে ড. সালেহ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ রাজস্ব আদায় ও ব্যয় ব্যবস্থাপনায় কমবেশি এগিয়ে। কিন্তু প্রযুক্তিগত ও পদ্ধতিগত দিক থেকে আমাদের দেশ এখনও পিছিয়ে রয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা উপলব্ধি করছি যে আমাদের আধুনিক যুগে পা রাখতে হবে… আমরা রাজস্ব আদায় ও ব্যয়কে আরও যুক্তিসঙ্গত করার চেষ্টা করছি এবং এর জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও অন্যান্য প্রযুক্তির প্রয়োজন রয়েছে।’

রাজনৈতিক ও নির্বাচনী ক্ষেত্রে অন্যান্য সংস্কারের চেয়ে অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়টি বেশি প্রয়োজনীয় উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এর জন্য সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি-বিধান আরও সরলীকৃত, স্বচ্ছ ও ন্যায্য করা প্রয়োজন।

সেমিনারে অর্থসচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার বলেন, বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো (বিএসডব্লিউ)-এর সাম্প্রতিক উদ্বোধন দেশের জন্য একটি মাইলফলক।

তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, বাংলাদেশ কাস্টমস একটি আধুনিক বিভাগ হিসেবে কাজ করবে- যা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হবে।

এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান আশা প্রকাশ করেন যে, আগামী অর্থ-বছরের (অর্থ-বছর ২৬) জাতীয় বাজেট প্রণয়নের আগে ব্যবসায়ী সমাজের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক পরামর্শ নেওয়া হবে।

সেমিনারে মোট ১৬ জন কাস্টমস কর্মকর্তাকে ‘ডব্লিউসিও সার্টিফিকেট অব মেরিট’ প্রদান করা হয়।

Share

Follow us